• বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ০৪:২৮ পূর্বাহ্ন
শিরোনামঃ
হিলি স্থলবন্দর দিয়ে আসছে ভারতের পেঁয়াজ ঋণ পাবেন না খেলাপিরা ১৫ শতাংশ কর দিলে কালোটাকা সাদা সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে উপকারভোগী বাড়ছে অসহনীয় মামলা জটে বিচার বিভাগ ন্যুব্জ: প্রধান বিচারপতি বদলাচ্ছে ধর্ষণের সংজ্ঞা প্রস্তাবে যুক্ত তৃতীয় লিঙ্গ আনন্দের ঢেউ কর্ণফুলীতে ভারতের নির্বাচনের পর ভিসা সহজ করা নিয়ে আলোচনা সম্পর্ক পুনর্গঠনের বার্তা যুক্তরাষ্ট্রের সব হাসপাতালের লিফটের সেফটি পরীক্ষার নির্দেশ বস্তিবাসীর জন্য ফ্ল্যাট বানাবে সরকার অবশেষে দেশের মাটিতে নোঙর করেছে এমভি আবদুল্লাহ ‘সবাইকে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু ও তাদের পরিবারের পাশে দাঁড়াতে হবে’ গেটলক সিস্টেমে যানজটমুক্ত মহাখালী বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক এগিয়ে নিতে কাজ চলছে শেষ হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ ৩৩৪ প্রকল্প প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রায় বাস্তবতার ছাপ মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত না হলে আসামিকে কনডেম সেলে নয় হজযাত্রীদের ভিসা অনুমোদনের সময় বাড়ানোর আহবান দ্রব্যমূল্যের লাগাম টানার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

শেষ সম্বল নিয়ে রাস্তায় বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ীরা

সিরাজগঞ্জ টাইমস / ৪৯ বার পড়া হয়েছে।
সময় কাল : শনিবার, ৮ এপ্রিল, ২০২৩

নতুন জামাকাপড় সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। ছাইচাপা আগুন থেকে ধোঁয়া উড়ছে। ট্রাকে করে সরানো হচ্ছে পোড়াস্তূপ। ব্যবসায়ীরা করুণ চোখে তাকিয়ে সেসব দেখছেন। তাদের মধ্যে কিছু ব্যবসায়ী রাস্তাতেই ‘শেষ সম্বল’ নিয়ে বসেছেন। বঙ্গবাজারের পার্শ্ববর্তী হানিফ ফ্লাইওভারের নিচে অস্থায়ীভাবে দোকান বসিয়েছেন অনেকে। প্লাস্টিকের বস্তা, চৌকি কিংবা টুল বিছিয়ে তারা পোশাক বিক্রি করছেন। এসব মালামালের অধিকাংশই বিভিন্ন কারখানায় ছিল। কিছু পোশাক আবার বঙ্গবাজারের সব মার্কেটে আগুন ছড়িয়ে যাওয়ার আগেই বের করতে পেরেছিলেন কেউ কেউ। তবে তা সামান্য।

এখন এই শেষ সম্বল বিক্রি করে ঈদের আগে কিছুটা ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন এসব ব্যবসায়ীরা।

ইসলামিয়া মার্কেটের ৩৮ নাম্বার দোকান আপডেট কালেকশন। সেখানে বিক্রি হতো বাচ্চাদের পোশাক। তাদের ২৫-২৬ লাখ টাকার মালামাল আগুনে পুড়েছে। তবে দোকানের কর্মচারীরা মিলে সামান্য পোশাক বের করতে পেরেছিলেন। সেসব নিয়েই চৌকি বিছিয়ে রাস্তায় বসেছেন তারা। পুড়ে যাওয়া দোকান আপডেট কালেকশনের মো. সাকিব বলেন, বঙ্গবাজারে আগুন লাগার পর আমাদের মার্কেটের সামনের অংশে আগুন লেগেছে। আমাদের দোকান ছিল একটু ভেতরে। জীবনবাজি রেখে ঝুঁকি নিয়ে এই মালামালগুলো বাঁচানো হয়েছে। দোকান তো পুড়ে গেছেই। এইটুকু মাল না বাঁচানো গেলে নিঃস্ব হয়ে যেতাম। আমাদের পাইকারি দোকান। একবস্তা মালেই ৫-৬ লাখ টাকা হয়ে যায়। আমরা মাত্র ১০-১২ লাখ টাকার মাল বের করতে পারছি। বাকি সব পুড়ে গেছে। এগুলো যদি কিছু বিক্রি করতে পারি তাইলে নতুন কিছু মাল কিনে ব্যবসা নতুন করে করার মতো অবস্থা তৈরি হবে।

বঙ্গবাজার গুলিস্তান মার্কেটে পাইকারি পাঞ্জাবি বিক্রি হতো। সেখানে ওসমান গার্মেন্টসের স্বত্বাধিকারী মো. সাদ্দাম। তার ১৯৭৮-৭৯ নাম্বারের দু’টি দোকান। দোকানের পাশাপাশি কিছু কারখানায় ও দর্জির দোকানে তার মালামাল ছিল। অবশিষ্ট সেই মালামাল নিয়ে রাস্তায় বস্তা বিছিয়ে বিক্রির জন্য বসেছেন। সাদ্দাম বলেন, আমার ব্যবসায় ছিল ৬০ লাখ টাকার। ৩০ লাখ টাকার মাল ছিল বিভিন্ন কারখানায়। বাকি ৩০ লাখ টাকার মাল দোকানে ছিল। সেটা কিছুই বের করতে পারি নাই। সকাল ৭টা বাজার আগেই আমাদের দোকান পুড়ে শেষ। সাদ্দাম জানান, মাসে ২০ হাজার টাকা দোকান ভাড়া দিয়ে তিনি সেখানে ব্যবসা করতেন। আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুদের থেকে সুদের বিনিময়ে ধার করেছিলেন। সেই টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন। বিভিন্ন কারখানা ও দর্জিরাও টাকা পাবে। তাই অবশিষ্ট পোশাক বিক্রি করে তাদের কিছুটা দেনা শোধ করবেন আর বাকিটা দিয়ে আবার ব্যবসা করে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করবেন।

রাস্তায় বস্তা বিছিয়ে শার্ট বিক্রি করছিলেন মায়ের দোয়া দোকানের মালিক আলম হোসেন। তিনি বলেন, আমার ১৫ লাখ টাকার মাল পুড়ে গেছে। ১২৯৫-৯৬ নাম্বার দোকানে শার্ট বিক্রি করতাম। কিছুই বের করতে পারি নাই। এখন কিছুই বুঝতেছি না। মাথাও কাজ করছে না। কারখানায় মাত্র দেড় লাখ টাকার মাল ছিল। এসব কাপড় নিয়ে তাই রাস্তায় বসছি।

এদিকে গতকাল সকাল সাড়ে ৯টায় বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ডের ৭৫ ঘণ্টা পর আগুন সম্পূর্ণভাবে নির্বাপণ সম্পন্ন হয়েছে বলে ঘোষণা দেয় ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স। এরপর সকাল ১০টায় পোড়াস্তূপ সরানোর কাজ শুরু হয়। বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স দোকান মালিক সমিতি জানায়, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) অনুমতি নিয়ে মেসার্স বুশরা ট্রেডার্স নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে পোড়াস্তূপ সরানোর দায়িত্ব দেয়া হয়। প্রতিষ্ঠানটি দরপত্রের মাধ্যমে ৪০ লাখ টাকায় এসব পোড়াস্তূপ কিনে নিয়েছে। তারা পোড়াস্তূপ নিয়ে গেলে ডিএসসিসি জায়গাটি পরিষ্কার করে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের অস্থায়ীভাবে এখানে বসার ব্যবস্থা করে দিবে।

বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স দোকান মালিক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. নাজমুল হুদা বলেন, আগুন অনেকটা নিয়ন্ত্রণে চলে আসার পর অনেকে বিচ্ছিন্নভাবে এখান থেকে মালামাল (পোশাক ও লোহা লক্কর) চুরি করে নিয়ে গেছে। প্রশাসন বা আমরা সেই নিরাপত্তা দিতে পারিনি। পরে অবশিষ্ট মালামাল আমরা যৌথভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে দরপত্রের মাধ্যমে একটি প্রতিষ্ঠানের কাছে সর্বোচ্চ দরে বিক্রি করে দিয়েছি। তারা এসব মালামাল নিয়ে যাওয়ার পর সিটি করপোরেশন জায়গাটি পরিষ্কার করে দিবে। মালামাল বিক্রির টাকা ব্যবসায়ী মালিক সমিতির কাছে থাকবে। পরবর্তীতে এ টাকা ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের দেয়া হবে।

জায়গাটি পরিষ্কার করতে কতোদিন লাগবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা এখনই নির্দিষ্ট করে বলতে পারবো না, কতোদিন লাগবে পরিষ্কার করতে। কতোদিনের মধ্যে ব্যবসায়ীদের অস্থায়ীভাবে বসার সুযোগ করে দিতে পারবো। আমরা পরিষ্কারের কাজ শুরু করেছি। জায়গাটি পরিষ্কারের কাজ শেষ হলে, নিরাপদ হলে, আমরা ব্যবসায়ীদের বসার ব্যবস্থা করে দেবো। আশা করছি রোববারের মধ্যে আমরা জায়গাটি পরিষ্কার করে ফেলতে পারবো। তারপর মঙ্গলবার বা বুধবারের মধ্যে আমরা ব্যবসায়ীদের অস্থায়ীভাবে বসার সুযোগ করে দিতে পারবো। তিনি বলেন, পুড়ে যাওয়া মার্কেটটি দুই তলা, তিন তলা ছিল। এখন খোলা জায়গায় সব ব্যবসায়ীকে তো বসার সুযোগ করে দেয়া সম্ভব নয়। তারপরও আমরা একটি দোকানে দুইজন করে বসার সুযোগ করে দেয়ার চেষ্টা করবো। ঈদের আগে তারা যদি এখানে একটু বসতে পারে, তাহলে দেনাদার ও পাওনাদারের কিছুটা সহানুভূতি পাবে। পাশাপাশি  কিছুটা ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর