• শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ০৮:৩২ অপরাহ্ন
শিরোনামঃ
র‍‍্যাপিড পাসে পরিশোধ হবে সব গণপরিবহনের ভাড়া আরও পাঁচ হাসপাতালে পরমাণু চিকিৎসাসেবা খুলনায় লবণাক্ত জমিতে বছরজুড়েই ফলছে ফসল সন্ত্রাসবাদে ঢাকার সাফল্যের প্রশংসা মার্কিন দপ্তরের ‘মা ও শিশুর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে বাংলাদেশ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ’ বে টার্মিনাল প্রকল্পে গতি বাংলাদেশ ও গাম্বিয়া রোহিঙ্গা গণহত্যা মামলার দ্রুত নিষ্পত্তিতে আশাবাদী বস্তিবাসীর জন্য ৯ কুলিং জোন করবে ডিএনসিসি খাদ্য নিরাপত্তায় ২০ লাখ টন গম কিনছে সরকার এনআইওতে চোখের চিকিৎসা নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী গাজায় যুদ্ধ বন্ধে যুক্তরাজ্যকে পাশে চায় বাংলাদেশ কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সচল করতে হবে মে মাসের জন্য এলপিজির দাম কমল ৪৯ টাকা সরকারীকরণ হচ্ছে শহীদ জননী জাহানারা ইমাম স্মৃতি জাদুঘর নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গড়ে তুলতে হবে: মুক্তিযুদ্ধমন্ত্রী বাংলাদেশিদের জন্য শিক্ষাবৃত্তি বাড়াতে আগ্রহী রাশিয়া কক্সবাজারে হবে উন্মুক্ত কারাগার উপজেলা নির্বাচন সুষ্ঠু করার লক্ষ্যে কাজ করতে মন্ত্রী-এমপিদের নির্দেশ আমাকে সরিয়ে তারা কাকে আনবে? সেনা সদস্যদের নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব

পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত সুইডিস বিচারপতি বাংলাদেশে সমাধিস্থ হতে চান

সিরাজগঞ্জ টাইমস / ৪৭ বার পড়া হয়েছে।
সময় কাল : রবিবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০২২

পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত সুইডিশ বিচারপতি সৈয়দ আসিফ শাহকার মৃত্যুর পর বাংলাদেশে সমাধিস্থ হওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চিঠি লিখেছেন। বাংলাদেশের এই অকৃত্রিম বন্ধু সুইডিস বিচারপতি ও কবি এক টেলিফোন আলাপে তার এই অন্তিম ইচ্ছের কথা জানান। তিনি বিজয়ের এই মাসে মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা পেয়েছিলেন বাংলাদেশ থেকে।

টেলিফোন আলাপে বিচারপতি সৈয়দ আসিফ বলেন, ‘আমার বয়স ৭২ বছর। আমি জানিনা, আমি আর কতদিন বাঁচবো। কিন্তু বাংলাদেশের একজন শুভাকাঙ্ক্ষী হিসেবে আমি বাংলাদেশের মাটিতেই সমাধিস্থ হতে চাই। বাংলাদেশের নাগরিক না হলে যেহেতু সেখানে সমাধিস্থ হতে পারবো না, তাই বাংলাদেশের নাগরিকত্ব চেয়ে আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে একটি চিঠি লিখেছি।’

সৈয়দ আসিফ শাহকার পাকিস্তানের পাঞ্জাবের হরোপ্পায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালে তিনি ছিলেন ২২ বছরের তরুণ। পাঞ্জাব স্টুডেন্ট ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। ২৫ মার্চের কালো রাত্রে পূর্ব পাকিস্তানের ওপর পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর ‘অপারেশন সার্চ লাইট’ নামের নির্মম ও নৃশংস জেনোসাইডের প্রতিবাদে পশ্চিম পাকিস্তানের নাগরিকদের একটি অংশ প্রতিবাদী হয়ে ওঠে। তাদের সঙ্গে প্রতিবাদ, সমাবেশ, কবিতা লেখা ও লিফলেট বিতরণ করেন এই তরুণ। এর পরিণামে তিনি নিজ পরিবার, সমাজ ও দেশের মানুষের কাছে ঘৃণার পাত্র হয়ে ওঠেন। তাকে ‘দেশদ্রোহী’ হিসেবে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। মুক্তিযুদ্ধের নয়মাস তিনি পাকিস্তানের কারাগারে নানারকম মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন সহ্য করেন। কিন্তু তিনি বাংলাদেশের বিপক্ষে যান নি। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের বিজয় অর্জনের পর সৈয়দ আসিফ বন্দীদশা থেকে মুক্তি পান।

সৈয়দ আসিফ বলেন, ‘বাংলাদেশের বিজয় না হলে, আমিও কারাগার থেকে মুক্ত হতে পারতাম না। আমাকে পাকিস্তানের কারাগারেই মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হতো অথবা কারাগারেই জীবন পার হয়ে যেত।’

জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর তিনি কিছুদিন লাহোরে পাকিস্তান টেলিভিশনে প্রযোজক হিসেবে কাজ করেন। কিন্তু নিজ দেশে ‘কুলাঙ্গার’ হিসেবে স্থায়ী পরিচিতি নিয়ে তিনি বেশিদিন পাকিস্তানে থাকতে পারেন নি। ১৯৭৭ সালে তিনি সুইডেনে রাজনৈতিক আশ্রয়ে যান। নতুন এক জীবন যুদ্ধ শুরু করেন। পরবর্তীতে সেখানেই তিনি হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান এবং কাজ শুরু করেন।

স্বাধীনতার ৪১ বছর পর ২০১২ সালে বাংলাদেশ সরকারের আমন্ত্রণে বিচারপতি আসিফ মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা গ্রহণের জন্য বাংলাদেশে আসেন। রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১২ সালের ১৫ ডিসেম্বর তার হাতে এই সম্মাননা তুলে দেন। সৈয়দ আসিফ নিজেকে পাকিস্তানের নাগরিক নয়, বরং বাংলাদেশের নাগরিক ভাবতে বেশি ভালোবাসেন। তাই, তিনি বাংলাদেশের নাগরিকত্বের জন্য আবেদন জানিয়েছেন। যাতে তার মৃত্যুর পর তাকে বাংলাদেশের মাটিতে সমাধিস্থ করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ইংরেজিতে লেখা ৭৬৭ শব্দের দীর্ঘ চিঠিতে তিনি বাংলাদেশ, বাংলাদেশের মানুষের প্রতি তার ভালোবাসার পাশাপাশি এদেশের মাটিতে সমাধিস্থ হওয়ার আকুল এক বাসনা ব্যক্ত করেছেন।

তিনি লিখেছেন, ‘বাংলাদেশের প্রতি আমার ভালোবাসা হয়তো আমি সারাজীবনেও ভাষায় প্রকাশ করে শেষ করতে পারবো না। আমি যখন বাংলাদেশে গিয়েছিলাম তখন আমাকে যে ভালোবাসা, সম্মান ও শুভেচ্ছা জানানো হয়েছে, তাতে আমি প্রচণ্ড বিহ্বল এবং আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলাম। যখন বাংলাদেশ থেকে সুইডেনে রওনা হবো তখন অনুভব করছিলাম যে, আমার চলে যাওয়া হবে এক প্রাণহীন প্রস্থান এবং আমার আত্মা পেছনে রয়ে যাবে।’

এই চিঠিতে তিনি আরও লিখেছেন, ‘সুইডেনে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে এক বৈঠকে আমি আমার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলাম যে, আমি বাংলাদেশের শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে সমাধিস্থ হতে চাই। তিনি আমার আকুলতা এবং বিষাদ দেখে দ্রুতই উত্তর দিয়েছিলেন, ‘সেটা সম্ভব নয়’। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘কেন? আপনি আমার জন্য কয়েক গজ জায়গা ফাঁকা করতে পারবেন না?’ তিনি বললেন, ‘না, এর কারণ আপনি বাংলাদেশের নাগরিক নন।’ বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী তিনি হয়তো ঠিকই বলেছেন। কিন্তু আমার মনে হয়েছিল, আমি যেন আকাশ থেকে মাটিতে পতিত হলাম। তার উত্তর আমাকে হতবাক করে দিয়েছিল এবং আমার মনে হয়েছিল, তিনি যেন ‘ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশ অ্যাওয়ার্ড’টি আমার কাছ থেকে কেড়ে নিচ্ছেন, যা ২০১২ সালে তারা আমাকে প্রদান করেছে। আমার কাছে সেই পুরস্কারটি কেবল একটি পুরস্কার ছিল না, এর মধ্যে দিয়ে আমি মুক্ত হয়েছি এবং আমার দীর্ঘ হারানো পরিচয় খুঁজে পেয়েছি।’

সুইডেনের স্টকহোমে বসবাসরত অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি সৈয়দ আসিফ শাহকার বাংলাদেশের জন্য এখনো কাজ করে যাচ্ছেন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বাংলাদেশের ওপর যে নৃশংস জেনোসাইড পরিচালনা করেছে তার বিচারের দাবিতেও তিনি সোচ্চার। স্বাধীনতার ৫১ বছর পার হয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পৃথিবীর আর কোনো দেশে এত বড় জেনোসাইড সংঘটিত হয়নি। তা সত্ত্বেও বাংলাদেশের জেনোসাইডকে জাতিসংঘ আজো স্বীকৃতি দেয়নি। গত ৩ অক্টোবর ২০২২ তারিখে জেনেভায় জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের সদর দপ্তরে জাতিসংঘের স্বীকৃতি আদায়ের দাবিতে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। ইউরোপিয়ান বাংলাদেশ ফোরামের সহায়তায় নেদারল্যান্ডস ভিত্তিক প্রবাসী সংগঠন বাংলাদেশ সাপোর্ট গ্রুপ, আমরা একাত্তর ও প্রজন্ম ৭১’ আয়োজিত এ আলোচনা সভায় সৈয়দ আসিফ শাহকার আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। সেখানে তিনি বাংলাদেশ জেনোসাইডকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য এবং হত্যাকারীদের বিচারের জন্য জাতিসংঘের প্রতি জোরালো আবেদন জানান।

চিঠিতে সৈয়দ আসিফ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্বৃতি দিয়ে বলেন, আমার মনে পড়ে আপনার সেই বক্তৃতা, যেখানে আপনি বলেছিলেন, ‘যে বিদেশি স্বাধীনতা যুদ্ধে সমর্থন করেছিল সেও একজন মুক্তিযোদ্ধা।’ আপনার কথা আমাকে এই হতাশা থেকে বেরিয়ে আসতে এবং সরাসরি আপনার দরজায় কড়া নাড়তে উদ্বুদ্ধ করেছে। ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশ সম্মাননা পেয়ে আমরা গর্বিত। বাংলাদেশের একজন মুক্তিযোদ্ধা যখন বাংলাদেশের নাগরিক হতে পারেন, এখানে থাকতে পারেন, একটি বাড়ির মালিক হতে পারেন, তখন মুক্তিযুদ্ধে সমর্থনকারী বিদেশি হয়েও কেন মৃত্যুবরণকারী বাংলাদেশের অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধার মতো আমাকে এখানে দাফন করা যাবে না। আমি কেন বাংলাদেশের নাগরিক হতে পারব না? একজন বাংলাদেশি মুক্তিযোদ্ধার মতো ঢাকায় আমার নিজের বাড়ি কেন নেই?

তিনি তাকে বাংলাদেশের বিদেশি মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে উল্লেখ করে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব এবং বাংলাদেশে তাকে সমাধিস্থ করাসহ একজন নাগরিকের সুযোগ সুবিধা দেওয়ার জন্য আবেদন জানান। এছাড়া তিনি আমৃত্যু বাংলাদেশের জন্য কাজ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি লিখেছেন, ‘আমি শুধু বিশ্বাস করি না, আমি নিশ্চিত যে আপনি আমার বিনীত অনুরোধটি আন্তরিকভাবে বিবেচনা করবেন।’


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর