• বুধবার, ২২ মে ২০২৪, ০৭:৩৬ পূর্বাহ্ন
শিরোনামঃ
তথ্যপ্রযুক্তি খাতে করারোপ হচ্ছে না ঢাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশা চলতে বাধা নেই টেলিটক, বিটিসিএলকে লাভজনক করতে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ ভারত থেকে ২শ কোচ কেনার চুক্তি বেসরকারি কোম্পানি চালাতে পারবে ট্রেন দেশে মাথাপিছু আয় বেড়ে ২৭৮৪ ডলার ৫ জুন বাজেট অধিবেশন শুরু চালু হচ্ছে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক শান্তি পুরস্কার বুদ্ধ পূর্ণিমা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা বার্তা পাঠ করলেন বিপ্লব বড়ুয়া ইরানের প্রেসিডেন্টের মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শোক নিত্যপণ্যের বাজার কঠোর মনিটরিংয়ের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর উত্তরা থেকে টঙ্গী মেট্রোরেলে হবে নতুন ৫ স্টেশন এমপিও শিক্ষকদের জন্য আসছে আচরণবিধি সরকার ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উন্নত করতে কাজ করছে: পরিবেশমন্ত্রী বাংলাদেশে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণে আগ্রহী কানাডা মেট্রোরেলে ভ্যাট এনবিআরের ভুল সিদ্ধান্ত ২৫ মে বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সের নির্মাণ কাজের উদ্ভোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী সাগরে মাছ ধরা ৬৫ দিন বন্ধ বান্দরবানে যৌথ বাহিনীর অভিযানে তিনজন নিহত বঙ্গবন্ধু ‘জুলিও কুরি’ পদক নীতিমালা মন্ত্রিসভায় উঠছে

টেকনাফে পাচারকালে শিশুসহ ৫৮ রোহিঙ্গা উদ্ধার, আটক ৪ দালাল

সিরাজগঞ্জ টাইমস / ২৩ বার পড়া হয়েছে।
সময় কাল : রবিবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৩

টেকনাফের বিভিন্ন ঘাটে অভিযান পরিচালনা করে মালয়েশিয়া যাওয়ার প্রস্তুতিকালে ৫৮ জনকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। তাদের একজন ছাড়া বাকি ৫৭ জনই উখিয়া-টেকনাফের বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা। উদ্ধারকৃতদের মধ্যে ৯ জন পুরুষ, ১৬ জন নারী ও ৩৩ জন শিশু রয়েছে। এ সময় পুলিশ মানবপাচারে জড়িত চারজন দালালকে আটক করতে সক্ষম হয়।

গতকাল শনিবার ভোররাতে ওই ৫৮ জনকে উদ্ধার করা হয়। আটককৃত দালালরা হলেন, টেকনাফ সদর ইউনিয়নের মহেষখালীয়া পাড়ার মো. ইয়াছিন, দরগারছড়ার মো. জুবায়ের, উত্তর লম্বরী এলাকার নাজির হোসাইন ও নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জের রামিমুল ইসলাম রাদিদ।

টেকনাফ মডেল থানার ওসি মো. ওসমান গণি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সম্প্রতি সাগরপথে মানবপাচার শুরুর খবরে পুলিশের বিশেষ টিম মেরিন ড্রাইভ সংলগ্ন সম্ভাব্য ঘাটে নিয়মিত টহল জোরদার করেছে। গত শুক্রবার দিবাগত রাতে আমাদের কাছে খবর আসে ক্যাম্প থেকে রোহিঙ্গাদের মালয়েশিয়া পাঠানোর কথা বলে দালালরা তাদের মেরিনড্রাইভ সংলগ্ন বিভিন্ন পয়েন্টে এনে জড়ো করেছে।

এ খবরের ভিত্তিতে সেখানে পুলিশের একাধিক টিম নিয়ে অভিযান পরিচালনা করা হয়।’

তিনি আরো বলেন, ‘ভোর পর্যন্ত পরিচালিত পুলিশের অভিযানে সদর ইউনিয়নের হাতিয়ারঘোনা বোট ঘাটসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে সাগরপথে মালয়েশিয়াগামী ৫৮ জন ব্যক্তিকে উদ্ধার করা হয়েছে। এ সময় মানবপাচারের জড়িত শীর্ষ চারজন দালালকেও আটক করা হয়।’

প্রতিবছর শীত মৌসুমের শুরুতে মানবপাচারকারীরা ট্রলারে চেপে সাগরপথে মালয়েশিয়ায় অবৈধভাবে লোক পাঠাতে সক্রিয় হয়ে ওঠে।

পাচারকারীদের প্রধান লক্ষ্য উখিয়া ও টেকনাফের আশ্রয় শিবিরের সাধারণ রোহিঙ্গারা। টেকনাফ সৈকতের মেরিনড্রাইভ সংলগ্ন ১০টি ঘাট দিয়ে মালয়েশিয়ার উদ্দেশে মানুষদের ট্রলারে ওঠানো হয়। ঘাটগুলো হচ্ছে সদর ইউনিয়নের মহেষখালীয়া পাড়া, লম্বরী, তুলাতলী, হাতিয়ার ঘোনা, রাজারছড়া, বাহারছড়া ইউনিয়নের নোয়াখালী পাড়া, মাথাভাঙ্গা, বড়ডেইল, কচ্ছপিয়া, সাবরাং ইউনিয়নের বাহারছড়া ঘাট। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার দৃশ্যমান তৎপরতা সত্ত্বেও মানবপাচারকারীদের এসব কর্মকাণ্ড থামানো যাচ্ছে না।

এর আগে গত ৭ নভেম্বর সাগরপথে মালয়েশিয়া নিয়ে যাওয়ার কথা বলে প্রায় দেড় শতাধিক রোহিঙ্গাকে ট্রলারে তোলে দালালরা।

তাদের তিনদিন-রাত সাগরে ঘুরিয়ে মালয়েশিয়া পৌঁছে যাওয়ার কথা বলে টেকনাফ মহেষখালীয়া পাড়া সৈকতে নামিয়ে দেওয়া হয়। দালালদের খপ্পরে পড়া মালয়েশিয়াগামী রোহিঙ্গাদের ওই দলটিতেও ছিল অধিকাংশ নারী ও শিশু। পরে ট্রলার থেকে নেমে রোহিঙ্গারা দিগ্বিদিক ছুটে যায়। সেদিনের ঘটনায় টেকনাফস্থ ১৬ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) চারজন দালালকে আটক করে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, মানবপাচারে সক্রিয় দালালরা রোহিঙ্গাদের কম খরচে মালয়েশিয়া পাঠানোর কথা বলে প্রথমে রাজি করায়। শুরুতে তাদের কাছ থেকে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা আদায় করা হয়। বলা হয়, বাকি টাকা মালয়েশিয়া পৌঁছলে দিতে হবে। অনেককে টাকা ছাড়াই ট্রলারে উঠানো হয়। এরপর তাদের ট্রলারে করে নামিয়ে দেওয়া হয় মিয়ানমারের চামিলা নামক এলাকায়। সেখানে অবস্থিত দালাল চক্রের সদস্যরা তাদের গ্রহণ করে নির্যাতনের মাধ্যমে তাদের স্বজনদের সাথে ফোনে যোগাযোগ করিয়ে তিন থেকে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত আদায় করে। তাদের চাহিদা মতো টাকা পরিশোধ করতে না পারলে চালানো হয় শারিরীক নির্যাতন। যাদের কাছ থেকে টাকা আদায় করা যায় তাদেরকে সেখান থেকে পাঠানো হয় থাইল্যান্ডে। সেখান থেকে আরেক ধাপে দালালরা টাকা আদায় করে পাঠিয়ে দেয় মালয়েশিয়া সীমান্তে। সেখানে অবস্থিত দালালরা তাদের গ্রহণ করে শেষ বারের মতো টাকা হাতিয়ে নিয়ে ছেড়ে দেয়। এভাবে মালয়েশিয়া পৌঁছতে বাংলাদেশ, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়া চার ধাপে দালালদের দিতে হয় মোটা অংকের টাকা। কোনো ধাপে টাকা আদায়ে ব্যর্থ হলে পৈশাচিক নির্যাতন চালিয়ে উল্টো ঘরে ফেরত পাঠানো হয়।

উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের রোহিঙ্গা যুবনেতা মোহাম্মদ মুসা বলেন, ‘মালয়েশিয়াতে রোহিঙ্গাদের একটি বড় অংশ কয়েক বছর ধরে অবৈধ ও বৈধভাবে বসবাস করে আসছে। তাদের মধ্যে অবিবাহিত রোহিঙ্গা যুবকদের সঙ্গে ক্যাম্পের রোহিঙ্গা নারীদের বিয়ে ঠিক হয়। পাসপোর্ট করে তাদের বৈধপথে সেখানে নিয়ে যাওয়া সম্ভব না হওয়ায় উভয়পক্ষ কথা বলে এসব বিবাহ উপযুক্ত নারীদের মালয়েশিয়ার উদ্দেশে দালালের হাতে তুলে দেয়। যাওয়ার পথে ওই নারীরা বিভিন্ন সময়ে দালালদের হাতে যৌন হয়রানির শিকার হয়ে থাকে।’

কতুপালং রোহিঙ্গা কাম্পের বাসিন্দা মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ বলেন, ‘রোহিঙ্গা অনেক নারীর স্বামী মালয়েশিয়ায় থাকেন। তারা আর বাংলাদেশে বা ক্যাম্পে না ফেরার লক্ষ্যে তাদের স্ত্রী-সন্তানদের ঝুঁকি নিয়ে সাগরপথে মালয়েশিয়া নিয়ে যাওয়ার জন্য রাজি হন।’ সাগরপথে মালয়েশিয়া যাওয়ার ঝুঁকির এ পথ দ্রুত বন্ধ করার দাবি জানান তিনি।

২০০৭ সালের দিকে বাংলাদেশি কিছু লোক সাগরপথে ঝুঁকি নিয়ে মালয়েশিয়া রওনা দেয়। তাদের অনেকে মাঝপথে প্রাণ হারায়, আবার অনেকে থাইল্যান্ড সীমান্তে নির্যাতন ভোগ করে মালয়েশিয়া পৌঁছতে সক্ষম হয়। এরপর ২০১২ সালের দিকে সাগরপথে মালয়েশিয়া যাত্রা শুরু হয়। ২০১৪ সালে সাগরপথে মালয়েশিয়াগামীদের থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায় গণকবর ও বন্দীশিবিরের খবর ফাঁস হওয়ার পর এ দেশেও নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। ২০১৫ সালে টেকনাফের শীর্ষ চারজন মানবপাচারকারী আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার পর সে বছরই থেমে যায় মানবপাচার। তিন বছর বন্ধ থাকার পর ২০১৮ সালে আবারও মানবপাচার শুরু হয়। বর্তমানে সাগরপথে মালয়েশিয়ায় মানবপাচারকারীদের প্রধান টার্গেট রোহিঙ্গারা।

সূত্র: কালের কণ্ঠ


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর