• শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ০৭:৪১ অপরাহ্ন
শিরোনামঃ
র‍‍্যাপিড পাসে পরিশোধ হবে সব গণপরিবহনের ভাড়া আরও পাঁচ হাসপাতালে পরমাণু চিকিৎসাসেবা খুলনায় লবণাক্ত জমিতে বছরজুড়েই ফলছে ফসল সন্ত্রাসবাদে ঢাকার সাফল্যের প্রশংসা মার্কিন দপ্তরের ‘মা ও শিশুর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে বাংলাদেশ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ’ বে টার্মিনাল প্রকল্পে গতি বাংলাদেশ ও গাম্বিয়া রোহিঙ্গা গণহত্যা মামলার দ্রুত নিষ্পত্তিতে আশাবাদী বস্তিবাসীর জন্য ৯ কুলিং জোন করবে ডিএনসিসি খাদ্য নিরাপত্তায় ২০ লাখ টন গম কিনছে সরকার এনআইওতে চোখের চিকিৎসা নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী গাজায় যুদ্ধ বন্ধে যুক্তরাজ্যকে পাশে চায় বাংলাদেশ কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সচল করতে হবে মে মাসের জন্য এলপিজির দাম কমল ৪৯ টাকা সরকারীকরণ হচ্ছে শহীদ জননী জাহানারা ইমাম স্মৃতি জাদুঘর নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গড়ে তুলতে হবে: মুক্তিযুদ্ধমন্ত্রী বাংলাদেশিদের জন্য শিক্ষাবৃত্তি বাড়াতে আগ্রহী রাশিয়া কক্সবাজারে হবে উন্মুক্ত কারাগার উপজেলা নির্বাচন সুষ্ঠু করার লক্ষ্যে কাজ করতে মন্ত্রী-এমপিদের নির্দেশ আমাকে সরিয়ে তারা কাকে আনবে? সেনা সদস্যদের নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব

গ্রামীণ অর্থনীতিতে নারীর স্বপ্নচূড়া

সিরাজগঞ্জ টাইমস / ৪৬ বার পড়া হয়েছে।
সময় কাল : শুক্রবার, ২০ জানুয়ারী, ২০২৩

উত্তরবঙ্গের মঙ্গা। এক সময় ভয়াবহ ছিল। আশ্বিন কার্তিক মাস এলেই এ অঞ্চলে শুরু হতো হাহাকার। কর্ম সংকটে খাদ্যের কষ্ট ছিল প্রকট। কচু ঘেচু খেয়ে ছড়িয়ে পড়তো ডায়রিয়া। অনাহারে মানুষও মারা যেত। বর্তমান সরকারে নানামুখী উদ্যোগে ফসলের বহুমুখীকরণসহ ক্ষুদ্র ব্যবসা থেকে শিল্পকারখানায় দিন বদলেছে। উত্তরের মঙ্গা আজ অতীত। অভাব-অনটন না থাকার কারণ নেই। নেই না খেয়ে মরে যাওয়ার সেই দিন। এ অঞ্চলের পুরুষদের পাশাপাশি নারীরা বিভিন্ন কাজে অর্থনীতি চাঙ্গা করছে। দৃশপট পাল্টে গেছে শহর বন্দর গ্রামের। আর সেই মঙ্গা বা অভাব চলে গেছে জাদুঘরে।

উত্তরের নীলফামারীর গ্রামীণ নারীরা কুটির শিল্প, গ্রামে গ্রামে গড়ে ওঠা পরচুল তৈরির কারখানা, বিভিন্ন ধরনের হাতের কাজ, সেলাই প্রভৃতির মাধ্যমে অর্থনীতিতে অবদান রাখতে সক্ষম হচ্ছে। গ্রামীণ নারীরা সংসারের যাবতীয় কাজ স¤পন্ন করার পরও বাড়তি আয় উপার্জনে আর্থিক সচ্ছলতার আনছে বিভিন্ন ধরনের কুটির শিল্পের কাজ করছে।  গ্রামীণ অর্থনীতির উপার্জনের প্রধান মাধ্যম হচ্ছে বাঁশ ও বেতের কাজ। গ্রামীণ মহিলারা বেতের সাহায্যে পাটি, জায়নামাজ, ঝুড়ি ইত্যাদি তৈরি করে থাকে। বাঁশের সাহায্যে মুরগির খোপরি, ঘরের বেড়া ইত্যাদি তৈরি করে, যা স্থানীয় বাজারে ও পাড়া প্রতিবেশীর কাছে বিক্রি করে আর্থিক প্রয়োজন মেটাই।

গ্রামীণ নারীরা ছোটা আকারে পোল্ট্রি শিল্পের কাজ করছে। দেশী ও বিদেশী জাতের স্বল্প সংখ্যক হাস মুরগি লালন-পালন করে তারা। বিভিন্ন মুরগি ও মুরগির ডিম বিক্রি করে তারা টাকা আয় করছে। গ্রামের অনেক নারী শাক-সবজির পাশাপাশি মৎস্য চাষ করে। মৎস্য চাষ ছোট হলেও অনেক সাফল্য ইতোমধ্যে অর্জিত হয়েছে।
গবাদিপশু পালন গ্রামীণ অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য অবদানকারী একটি কাজ। গ্রামের এমন কোনো বাড়ি নেই, যাদের দুই- চারটি গরু ছাগল থাকে না। গরু দিয়ে চাষাবাদের পাশাপাশি দুধ ও গরুর বাছুর বিক্রির মাধ্যমে সংসারের প্রায়োজনীয় চাহিদা পূরণ করে। ব্ল্যাক বেঙ্গল জাতীয় ছাগল পালন অত্যন্ত লাভ জনক বলে বিবেচিত। কারণ এ জাতীয় ছাগল বছরে একাধিক বাচ্চা দেয়। যার ফলে নারীরা পারিবারিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হয়েছে।

উত্তরের নীলফামারী ছিল এক সময় অভাব অনটনের জেলা। ভাগ্য পরিবর্তনে আজ গ্রামীণ নারীদের হাতের বিভিন্ন কারুকার্য দেশে-বিদেশে ব্যাপক চাহিদা জাগাতে সক্ষম হয়েছে। গ্রামীণ বিশাল জনগোষ্ঠীর মধ্যে নারীদের এই অবদান অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিশেষ উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে। সংসারে ফিরেছে সচ্ছলতা, হয়েছেন স্বাবলম্বী, মুখে ফুটেছে হাসি।

নীলফামারী সদর উপজেলার লক্ষ্মীচাপ ইউনিয়নের পারঘাট আলোর বাজারে গড়ে ওঠা স্বপ্নচূড়া হস্ত কুটির শিল্প। এখানে অসংখ্য গ্রামীণ নারী প্রশিক্ষণ নিয়ে কাজ করে হয়েছেন স্বাবলম্বী। এখানে নারীরা সংসারে কাজ শেষে নিজবাড়িতে বসেই তাদের নিপুণ হাতে ২০ ধরনের নানান আকৃতির পণ্য তৈরি করছেন। তারা পাট দিয়ে তৈরি করছেন ম্যাট, ওয়াল ম্যাট, রাউন্ড ম্যাট, ব্যাগ এবং হোগলা পাতা দিয়ে ফুলদানী, টব, বাস্কেটসহ নানান রকমের পণ্য। এসব পণ্যের প্রতিটি বাজার মূল্য প্রায় ৩০০-১০০০ টাকা পর্যন্ত। প্রতি সপ্তাহে নারীরা তাদের তৈরিকৃত এসব পণ্য স্বপ্নচূড়ায় এনে সরবরাহ করেন। এতে তাদের মাসিক আয় হচ্ছে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা। এ সব পণ্য তৈরির কাঁচামালের যোগান আর্টিশান ও বিডিকেশন কো¤পানি দিয়ে থাকে। আর এসব পণ্য জার্মানি, জাপান, ইতালি, ফ্রান্স, মরোক্ক, হংকংসহ বিদেশের রপ্তানি করা হচ্ছে।

একটা সময় যে গ্রামীণ নারীদের সময় কাটত অলসভাবে তারাই এখন স্বপ্ন দেখছেন আকাশছোঁয়া। জেলা সদরের পলাশবাড়ী ইউনিয়নের সুমিত্রা রানী, কনিকা রানী, ফুলো বালা বলেন, এখান থেকে আয় করে তাদের সংসারের সচ্ছলতা ফিরে এসেছে। এখন আর আগের মতো সংসারে অভাব মনে হয় না তাদের। অনেক ভালো আছেন তারা। এখানকার এসব পণ্যগুলো মানসম্মত ও পরিবেশ সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়ায় বিদেশে প্রচুর চাহিদা,জাপান, অস্টেলিয়া, ফ্রান্স, ইতালি, আমেরিকা, হংকংসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হয়। স্বপ্নচূড়ার উদ্যোক্তা ও পরিকল্পনাকারী শঙ্কর চন্দ্র রায় জানান, কারিগরদের কাছে পণ্যের কাঁচামাল আমরা সরবরাহ করি এবং আমরাই সঠিক দামে তৈরি পণ্যগুলো ক্রয় করে বিদেশী বায়ারের কাছে বিক্রয় করে থাকি। এই কাজের মাধ্যমে এলাকার গ্রামীণ পরিবারগুলো হচ্ছে উপকৃত অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী।

মূল উদ্যোক্তা শঙ্কর রায় আরও বলেন, আমরা কয়েক বন্ধু মিলে চার লাখ টাকা মূলধন নিয়ে এই কুটির শিল্পের ব্যবসা শুরু করি। দুই বছরে আমাদের মোট মূলধন ছাড়িয়ে গেছে। আমরা এখন পাঁচ হাজার নারীর নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করার জন্য কাজ করছি। বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক)-এর উপ-মহাব্যবস্থাপক হোসনে আরা বেগম বলেন, গৃহিণীরা এখন আর সংসারের কাজ শেষ করে বসে থাকতে চায় না। নীলফামারীর জেলার ৬০টি ইউনিয়নের প্রতিটি গ্রামে গ্রামে গড়ে উঠেছে ক্ষুদ্র কুঠির শিল্পকারখানা। ঘুরলেই চোখে পড়ে নারীদের ক্ষুদ্র নানা কাজে অংশগ্রহণের চিত্র। নারীদের অর্থনৈতিক কর্মকা-ে অংশগ্রহণের ফলে অর্থনীতির চাকা মজবুত হচ্ছে এই অঞ্চলের। ঘুরে দাঁড়াতে পারছেন নারীরা। নারীদের মধ্য থেকে উদ্যোক্তা তৈরি হচ্ছে, তারা কর্মক্ষেত্র তৈরি করছেন। এর ফলে নারীরা যেমন সমৃদ্ধ হচ্ছেন তেমনি সংসারে সক্ষমতা বাড়ছে। নীলফামারীতে গ্রামে গ্রামে কুটির শিল্প ও পরচুলা তৈরির ফ্যাক্টরি হওয়ায় এলাকায় একটা পরিবর্তন এসেছে। এ ছাড়া নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেডে ২৫ হাজার নারী বিভিন্ন কারখানায় কাজ করছে। এখানে কাজ করে অনেক নারী সংসারের অভাব ঘুচিয়েছেন। ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া করাচ্ছেন। নারীদের অর্থনৈতিক কর্মকা-ে ব্যস্ততা বেড়েছে। যারা কাজ করেন তারা সবাই নারী। তাদের সংসারে উন্নতির পরিবর্তন এসেছে। গ্রামের নারীদের অর্থনৈতিক কর্মকা-ের বিকাশে বিসিক নানাভাবে পাশে রয়েছে এবং সহযোগিতা করছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর