• সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:২১ অপরাহ্ন
শিরোনামঃ
রোগীর প্রতি অবহেলা বরদাশত করব না স্কুলে থাকবে না দ্বিতীয় শিফট কোরবানির জন্য এক কোটি ৩০ লাখ গবাদিপশুর জোগান রয়েছে: প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী চলতি বছর মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি আলোচনা শুরু করবে বাংলাদেশ-থাইল্যান্ড মে থেকে বাংলাদেশে ফ্লাইট চালু করবে ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্স ও এয়ার চায়না চলতি মাসের ২৬ দিনে এলো ১৬৮ কোটি ডলার বাজেট হবে জনবান্ধব রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে পাঁচ সন্ত্রাসী আটক রুমায় সেনা অভিযানে দুই কেএনএ সন্ত্রাসী নিহত তাপদাহে দেশে লবণ উৎপাদনে রেকর্ড ফরিদপুরের ঘটনায় জড়িতদের ছাড় নেই প্রধানমন্ত্রী আজ দেশে ফিরছেন থাই ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগের আহ্বান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দেশের ওষুধ যাচ্ছে ১৫৭ দেশে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে মূল সড়কে বন্ধ হচ্ছে মোটরসাইকেল: বিআরটিএ চেয়ারম্যান গবেষণার মাধ্যমে নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনের আহ্বান প্রাণিসম্পদমন্ত্রীর বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানির অনুমোদন দিল ভারত আগামীকাল দেশের পথে রওনা হচ্ছে এমভি আবদুল্লাহ স্বাস্থ্য বিভাগে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব সরকারি সুবিধাভোগী নির্বাচনের প্রচারে নামলে প্রার্থীতা বাতিল: ইসি রাশেদা

অবারিত হলো বেসরকারি খাতের বৈদেশিক মুদ্রা ঋণ

সিরাজগঞ্জ টাইমস / ৫০ বার পড়া হয়েছে।
সময় কাল : সোমবার, ১০ এপ্রিল, ২০২৩

অবারিত করা হলো বেসরকারি খাতের বৈদেশিক মুদ্রা ঋণ। বৈদেশিক মুদ্রায় দায় কমাতে আগে রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল বা ইপিজেডের শিল্পকারখানার জন্য বৈদেশিক মুদ্রায় ঋণ নেয়ার অনুমোদন ছিল। আর এ অনুমোদন দেয়া হতো শিল্পের মূলধনী যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমদানির জন্য। এখন ইপিজেডের বাইরে দেশের অভ্যন্তরীণ অন্যান্য শিল্পের সব ধরনের পণ্যের জন্যই এ ঋণ নেয়ার অনুমোদন দেয়া হয়েছে। তবে অফশোর ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে এই ঋণ এনে তা অভ্যন্তরীণ ব্যাংকিং ইউনিটের (ডিবিইউ) মাধ্যমে ব্যবহার করতে হবে। বেসরকারি খাতে বিদেশী ঋণ অবারিত করার বিষয়ে বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, আপাতত সঙ্কট মেটানোর জন্য এ ঋণ আনা হলেও দীর্ঘ মেয়াদে এর বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। কারণ এতে একদিকে বৈদেশিক মুদ্রায় দায় বেড়ে যাবে। অপর দিকে টাকার বিপরীতে ডলারের মূল্য বৃদ্ধিতে মুদ্রার বিনিময়জনিত ক্ষতি হবে। পাশাপাশি সামনে ঋণ পরিশোধের জন্য বৈদেশিক মুদ্রার মজুদের ওপর চাপ আরো বেড়ে যাবার আশঙ্কা রয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, শিল্প কারখানায় বৈদেশিক মুদ্রার সঙ্কট মেটাতে সরবরাহ বাড়ানোর নানা উদ্যোগ নিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এজন্য বিদ্যমান নীতিমালা শিথিল করা হচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে বিদেশ থেকে ব্যাংকের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রায় নেয়া ঋণের অংশ স্থানীয় শিল্পেও ব্যবহারের সুযোগ দেয়া হয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রায় দায়দেনা কমাতে আগে এ ধরনের অনুমোদন দেয়া হতো না। নতুন উদ্যোগে বৈদেশিক মুদ্রায় শুধু দায়ই বাড়বে না, বরং সামনে ঋণ পরিশোধে বৈদেশিক মুদ্রার চাপ আরো বেড়ে যাবে।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ও ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. আহসান এইচ মনসুর গতকাল এ বিষয়ে নয়া দিগন্তকে বলেছেন, এ ধরনের ঋণ নেয়ার অনুমোদনের ক্ষেত্রে পদক্ষেপ অত্যন্ত সতর্কতার সাথে নিতে হয়। কারণ টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বেড়ে যাচ্ছে। যিনি ৮০ টাকা রেটের সময় এ ধরনের ঋণ নিয়েছিলেন তাকে এখন ১১০ টাকা দরে ডলার কিনে তা পরিশোধ করতে হচ্ছে। সামনে যে ডলারের দাম বাড়বে না তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। তিনি মনে করেন, যিনি এই ঋণ নেবেন তাকেও সতর্কতার সাথে নিতে হবে। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন হয় এমন ব্যবসার জন্যই এই ঋণ নেয়া প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন। এ ধরনের ঋণ দেশে বৈদেশিক মুদ্রায় দায় বাড়াবে। তবে চলমান সঙ্কটের জন্য কিছুটা ভালো হতে পারে এই উদ্যোগ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, বেসরকারি খাতে বৈদেশিক মুদ্রায় ঋণ অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাচ্ছে। গত ৩১ ডিসেম্বর শেষে বেসরকারি খাতে বৈদেশিক মুদ্রায় ঋণ বেড়ে হয়েছে প্রায় ২৫ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে স্বল্প মেয়াদি অর্থাৎ এক বছরের কম সময়ের ঋণই রয়েছে প্রায় সাড়ে ১৬ বিলিয়ন ডলার, যা মোট বেসরকারি খাতের ঋণের প্রায় ৬৫ শতাংশ। এর মধ্যে ব্যাংকগুলোর বৈদেশিক মুদ্রায় বিদেশ থেকে তহবিল সংগ্রহের (ওবিইউ) সীমা রয়েছে ৮.০৯ বিলিয়ন ডলার। বেসরকারি খাতে বৈদেশিক মুদ্রায় দায় বেড়ে যাওয়ায় চাপ বেড়ে গেছে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদের ওপর। ইতোমধ্যে এ চাপ সামলাতে পণ্য আমদানের জন্য কড়াকড়ি করা হয়েছে। অত্যবশ্যকীয় পণ্য ছাড়া অন্য পণ্য আমদানিতে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে।

গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে জারি করা এক সার্কুলারে বলা হয়েছে, আগে ওবিইউ মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রায় ঋণ নিয়ে তা অভ্যন্তরীণ ব্যাংকিং ইউনিটের মাধ্যমে (ডিবিইউ) স্থানীয় শিল্প কারখানায় ২৫ শতাংশ ব্যবহার করার অনুমোদন দেয়া হয়েছিল। শিল্পের মূলধনী যন্ত্রপাতি, শিল্পের কাঁচামাল ও সরকারি কেনাকাটার জন্য এ ঋণ ব্যবহার করা যেত। গতকাল তা আরো শিথিল করে ওবিইউর মাধ্যমে নেয়া বিদেশী ঋণের ৪০ শতাংশ ডিবিইউয়ের মাধ্যমে স্থানীয় শিল্প কারখানায় ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আর আগে তিনটি খাত উল্লেখ ছিল, এখন চাল, ডাল, আটা ময়দা থেকে শুরু করে সবধরনের পণ্যের জন্যই এ ঋণ ব্যবহারের সুযোগ দেয়া হয়েছে।

এ ধরনের অনুমোদন বৈদেশিক মুদ্রার চাপ আরো বেড়ে যাবে। কারণ এসব ঋণ বৈদেশিক মুদ্রায় নিয়ে তা বৈদেশিক মুদ্রায় সুদে আসলে পরিশোধ করতে হয়। এ ধরনের ঋণের সুদ আপাতত কম মনে হলেও বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময়জনিত ক্ষতি বেড়ে যায়। কারণ গত এক বছরে ডলারের বিপরীতে টাকার মান হারিয়েছে প্রায় ৩০ শতাংশ। এখন সুদ যদি ৬ শতাংশ হয় তাহলে প্রকৃত কার্যকর সুদ দাঁড়াবে ৩৬ শতাংশ। আবার এ ধরনের ঋণ এক বছর বা কম মেয়াদে হওয়ায় এক বছরের মধ্যেই এ ধরনের বৈদেশিক ঋণ পরিশোধে চাপ বেড়ে যাবে। গত এক বছর যাবত বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ কমে যাচ্ছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত উঠে গিয়েছিল। এখন তা ৩১ বিলিয়ন ডলারের ঘরে নেমে গেছে। আইএমএফের হিসেবে তা ২৩ বিলিয়ন ডলারে নেমে গেছে। এখন বৈদেশিক মুদ্রায় দায় বেড়ে গেলে সামনে ঋণ পরিশোধের চাপ আরো বেড়ে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, এমনিতেই বর্তমানে বৈদেশিক মুদ্রার দায় বেড়ে গেছে, এজন্য চাপ বেড়েছে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদের ওপর। এর ওপর স্থানীয় শিল্প কারখানায় বৈদেশী ঋণ দেয়ার সুযোগ বাড়ানোর ফলে এ চাপ আরো বেড়ে যাবে। এমনিতেই এক শ্রেণীর ব্যবসায়ীরা স্থানীয় মুদ্রায় ঋণ নিয়ে তা ফেরত দিচ্ছেন না। এতে বেড়ে যাচ্ছে ব্যাংকের খেলাপি ঋণ। আর এ খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ায় ব্যাংকগুলোর তহবিল ব্যবস্থাপনা ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। বাড়ছে মূলধন ঘাটতি। এমনি পরিস্থিতিতে ঢালাওভাবে বিদেশী ঋণ ব্যবহারের অনুমোদন দেয়ায় হিতে বিপরীত হতে পারে। এভাবে বৈদেশিক মুদ্রার সরবরাহ না বাড়িয়ে রেমিট্যান্স বাড়ানোর ওপর বেশি নজর দিলে আরো বেশি সুবিধা হতো। একই সাথে ওভার ইনভয়েজিংয়ের মাধ্যমে মুদ্রা পাচার ঠেকানোর জন্য কঠোর পদক্ষেপ নিলে এবং পাচারকারীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ নিলে বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা কমে যেত। এতে বৈদেশিক মুদ্রায় ঋণ জাতির ঘাড়ে কম চাপতো বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন।

প্রসঙ্গত, বৈদেশিক মুদ্রার চাপ যখন ক্রমান্বয়ে বাড়ছে তখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে চলমান সঙ্কট মেটানোর জন্য নীতিমালা শিথিল করেছে। আগে অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটের (ওবিইউ) মাধ্যমে যে পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রায় ব্যাংকগুলো বিদেশ থেকে তহবিল সংগ্রহ করত তা শুধু ইপিজেডের মধ্যে অবস্থিত শিল্প কারখানার জন্য ঋণ দিতে পারত ব্যাংকগুলো। কিন্তু ডলার সঙ্কটের কারণে ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের প্রয়োজনীয় এলসি খোলার অনুমোদন দিতে পারছে না। এ কারণে গত ১৪ জুলাই এক সার্কুলারের মাধ্যমে অফশোর ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে সংগ্রহ করা তহবিল ইপিজেডের বাইরের শিল্প কারখানায় ব্যবহারের জন্য ঋণ দেয়ার অনুমোদন দেয়া হয়। বলা হয়, এ সুবিধা কেবল ৩০ ডিসেম্বের পর্যন্ত বহাল থাকবে। কিন্তু ডলারের সঙ্কট না কেটে বরং আরো বেড়ে যাওয়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ নীতিমালার শিথিলতা আরো ছয় মাসের জন্য বাড়ানো হয়েছিল গত জানুয়ারিতে। ওই সময় এ ধরনের এক নির্দেশনায় বলা হয়েছিল, ওবিইউর মাধ্যমে ব্যাংকগুলোর সংগ্রহ করা বৈদেশিক মুদ্রা স্থানীয় শিল্প কারখানার জন্যও (ডিবিইউ) ব্যবহার করার মেয়াদ আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত বর্ধিত করা হলো। গতকাল আবারো তা আরেক দফা শিথিল করা হলো।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর