• সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ০২:৫২ পূর্বাহ্ন
শিরোনামঃ
থাই ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগের আহ্বান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দেশের ওষুধ যাচ্ছে ১৫৭ দেশে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে মূল সড়কে বন্ধ হচ্ছে মোটরসাইকেল: বিআরটিএ চেয়ারম্যান গবেষণার মাধ্যমে নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনের আহ্বান প্রাণিসম্পদমন্ত্রীর বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানির অনুমোদন দিল ভারত আগামীকাল দেশের পথে রওনা হচ্ছে এমভি আবদুল্লাহ স্বাস্থ্য বিভাগে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব সরকারি সুবিধাভোগী নির্বাচনের প্রচারে নামলে প্রার্থীতা বাতিল: ইসি রাশেদা ৯ মে থেকে হজের ফ্লাইট শুরু সবাইকে দেশ ও জনগণের জন্য কাজ করতে হবে শেখ জামালের আজ ৭১তম জন্মদিন নারীর প্রতি বৈষম্য দূর করতে কাজ করছে সরকার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়াতে চায় বাংলাদেশ শেরে বাংলার মৃত্যুবার্ষিকীতে প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা আড়াই মাসে টিআইএনধারী বেড়েছে ২ লাখ সিসি ক্যামেরার আওতায় আসবে কক্সবাজার প্রতিবন্ধীদের মূল ধারায় আনতে প্রচেষ্টা আছে সরকারের: সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নতুন ১১ জেলা যুক্ত হচ্ছে রেল নেটওয়ার্কে আসছে পড়াশোনার শিক্ষা চ্যানেল এসটিপি ছাড়া নতুন ভবনের অনুমোদন নয়: গণপূর্তমন্ত্রী

দলে ফেরার দিন গুনছেন বিএনপির বহিষ্কৃতরা

সিরাজগঞ্জ টাইমস / ৬৭ বার পড়া হয়েছে।
সময় কাল : বৃহস্পতিবার, ২৮ জুলাই, ২০২২

আগামী দ্বাদশ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি যখন ক্ষমতায় যাওয়ার নানা ছক কষতে ব্যস্ত, ঠিক তখন দলের এক সময়ের ত্যাগী নেতারা পার করছেন জীবনের চরম দুঃসময়। দল থেকে বহিষ্কার ও পদ হারিয়ে অনেকটাই দিশেহারা তারা। তবে কেন এই ভাগ্যবরণ- এমন প্রশ্নের উত্তর জানা নেই তাদের কারোরই। এ নিয়ে দুঃখবোধ আছে। আফসোস-অভিমানেরও কমতি নেই। আবার কারো এতটুকু প্রত্যাশাও নেই। যতটুকু মূল্যায়ন পেয়েছেন তা নিয়েই কাটিয়ে দিতে চান বাকি জীবন। অনেকের দৃঢ় বিশ্বাস, দল থেকে ফের ডাক আসবে। প্রতিকূলতা যতই আসুক জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত বিএনপির ছায়াতলে থাকবেন। তবুও দল ত্যাগ কিংবা নতুন কোনো দল গঠনের চিন্তা নেই তাদের। বিএনপির বহিষ্কৃত ও গুরুত্বপূর্ণ পদ হারানো একাধিক নেতা এসব তথ্য জানিয়েছেন।

অন্যদিকে বহিষ্কৃত নেতাদের দলে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে এখনো ভাবার সময় আসেনি বলে জানিয়েছেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। জানা যায়, বিষয়টি নিয়ে বিএনপির নীতিনির্ধারকদের মধ্যেও সৃষ্টি হয়েছে অসন্তোষ। প্রকাশ্যে মুখ না খুললেও বেশির ভাগ নেতা মনে করেন, নির্বাচনের আগে ত্যাগীদের ফিরিয়ে আনা জরুরি। যেসব জেলা বা বিভাগের নেতাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, সেসব জায়গায় নতুন কমিটি দিয়েও সংগঠন গোছানো যাচ্ছে না। কারণ ওইসব জায়গায় নেতাকর্মীরা বলয়ভিত্তিক রাজনীতি করেন। বিএনপির বেশির ভাগ সিনিয়র নেতার মতো পরীক্ষিত নেতাকর্মীদের দল থেকে বাদ দেয়ায় তৃণমূলে ক্ষোভ ও হতাশা বাড়ছে। এতে আগামী দিনে রাজপথের আন্দোলনে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ভোরের কাগজকে বলেন, যাদের বহিষ্কর করা হয়েছে, তারা ছিলেন দলের নিবেদিতপ্রাণ। এতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে নিশ্চয়ই গ্রহণযোগ্য কারণের ভিত্তিতেই দল বাধ্য হয়েছিল এমন সিদ্ধান্ত নিতে। তাদের দলে ফেরানোর ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আগে ব্যাপারটি উঠতে হবে; তারপরে সবার মতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। আমার মনে হয় সেই সময় এখনো আসেনি।

দল থেকে এখন দূরে থাকলেও বিএনপির রাজনীতিতে এক সময়ে বহিষ্কৃত এসব নেতারা ছিলেন ‘ত্যাগী ও দাপুটে’। বর্তমানে ক্ষমতার দাপট না থাকায় রাজনৈতিক মামলাগুলোও জেঁকে ধরেছে তাদের। সপ্তাহে তিন দিন আদালতে হাজিরা দিচ্ছেন। আয় রোজগারও তেমন নেই। তবুও বসে নেই তারা। নিজ এলাকায় নেতাকর্মীদের কল্যাণে সাধ্যমতো নীরবে কাজ করে যাচ্ছেন। তাদের আক্ষেপ, দল থেকে অন্তত আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিলে তাদের পরিস্থিতি এতটা করুণ হতো না।

নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে সরাসরি দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকারকে। বহুদিন তো দলীয় কর্মকাণ্ডে ব্যস্ত থাকতেন, এখন কীভাবে কাটে সময়? জানতে চাইলে একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে তিনি ভোরের কাগজকে বলেন, জনগণের সেবা করা আমার নেশা, তাই আছি তাদের নিয়েই। দুঃসময়ে একের পর এক পদ থেকে আমাকে বাদ দেয়া হয়েছে, তবুও আমার আর কোনো অভিযোগ নেই। আমি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী, দলের অনুগত। দলের আমি একজন সমর্থক ও কর্মী হিসেবে রাজনীতি করে যাব। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আপাতত দল পরিবর্তনের ইচ্ছা নেই। তবে পরিস্থিতি কখন কী হয়, তা বলা যায় না। তবে দল ডাকলে অবশ্যই সাড়া দেব।

একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের টক শোতে গিয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ইঙ্গিত করে এক বক্তব্য দিয়েই দলের বিরাগভাজন হয়েছিলেন কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য মেজর (অব.) আখতারুজ্জামান রঞ্জন। আগামী নির্বাচন নিয়ে তিনি বলেছিলেন, লন্ডন থেকে ওহি আসবে এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে বিএনপি। এমন বক্তব্য দেয়ার কয়েক দিন পরই তাকে বহিষ্কার করা হয়।

বর্তমানে মেজর আখতারুজ্জামান গ্রামের বাড়িতে অবসর দিন কাটাচ্ছেন। তিনি বলেন, বহিষ্কারের খবর শুনে প্রথম হাসি পেয়েছিল। পরে ভেবে ভালোই লাগছে বহিষ্কারের আগ পর্যন্ত বিএনপিতে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ছিলাম। এ ঘটনায় কষ্টও আছে তবে তা এখন বলব না। সামর্থ্য অনুযায়ী এলাকার নেতাকর্মীদের পাশে থাকার চেষ্টা করছি। দলে ফেরানো হবে কি হবে না, সেটা পরের হিসাব।

খুলনা বিএনপির প্রাণ নজরুল ইসলাম মঞ্জুরও অনেকটা একই দশা। সাংগঠনিক দক্ষতা নিয়ে জনগণের কল্যাণে মাঠঘাট চষে বেড়ানো এ নেতা গত বছরের ২৫ ডিসেম্বর হঠাৎ করেই ছিটকে পড়েন দল থেকে। কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয় তাকে। এরপরে অভিমানে চুপসে গেছেন তিনি। দলের সঙ্গে যোগাযোগ আছে কিনা? জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি সার্বক্ষণিক দলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমার পদ ফিরিয়ে দিতে কয়েকদিন আগেও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে দ্বিতীয়বারের মতো আবেদন করেছি। তিনি বলেন, খারাপ লাগে আমার জন্য খুলনার দুই শতাধিক নেতাকর্মী পদত্যাগ করে দল থেকে দূরে আছেন।

তিনি বলেন, দল আমাকে পদ বঞ্চিত করলেও নেতাকর্মীদের সঙ্গে আমি আছি। ৪৪ বছর দেশের একটি অঞ্চলে বিএনপিকে তিলে তিলে সুসংগঠিত করেছি। আমি এখনো আশায় আছি, দল ফের আমাকে মূল্যায়ন করবে। দলে পরিবর্তনের ইচ্ছা আছে কিনা? এমন প্রশ্নে মঞ্জুর সোজা উত্তর- এ নিয়ে এখনো ভাবার সময় আসেনি।

সম্প্রতি কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে প্রথমবারের মতো হেরেছেন মনিরুল হক সাক্কু। নির্বাচনের উছিলায় হারিয়েছেন দলীয় পদও। বিএনপি থেকে আজীবন বহিষ্কার হয়ে এখন অনেকটাই অবসর যাপন করছেন তিনি। যুবদল সভাপতি থেকে ধাপে ধাপে জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং পরে কেন্দ্রীয় সম্পাদক হয়েছিলেন তিনি। জানতে চাইলে সাক্কু বলেন, আমি গত ৪২ বছর ধরে বিএনপির রাজনীতি করি। বিএনপি আমার রক্তে মিশে আছে। দল যে সিদ্ধান্তই নিক, আমি বিএনপি ছাড়ব না। আমি আমৃত্যু বিএনপির সঙ্গে থাকব। আমার বিশ্বাস দল পুনর্বিবেচনা করবে এবং আমি সেই অপেক্ষায় আছি।

দল থেকে বহিষ্কার করা না হলেও কৌশলে অনেক ত্যাগী নেতাকেই মাইনাস করে রেখেছে বিএনপি। এর মধ্যে অন্যতম সাবেক প্রতিমন্ত্রী আ ন ম এহসানুল হক মিলন। তিনি বিএনপির কে›ন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক। গত ৬ এপ্রিল এই পদ থেকে সরিয়ে করা হয় নির্বাহী সদস্য। আকস্মিক এই পদাবনতির কারণ আজও খুঁজে পাননি তিনি। তিনি বলেন, আমি বিএনপিতে জন্ম নিয়েছি। এই দলকে প্রতিষ্ঠিত করেছি। সময় কীভাবে কাটছে এখন? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বললেন, সপ্তাহে দুদিন যায় চাঁদপুরের আদালতে হাজিরা দিয়ে। পরের দুদিন বিশ্রামে থাকতে হয়। তারপর লেখালেখি করি।

প্রায় তিন দশক বরিশাল বিএনপিতে একক আধিপত্য ধরে রেখেছিলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মজিবর রহমান সরোয়ার। ২০২১ সালের ৩ নভেম্বর বরিশাল মহানগর বিএনপির নতুন কমিটিতে রাখা হয়নি তাকে। এক নেতার এক পদ নীতির কারণে তাকে বাদ দেয়ার যুক্তি মানতে নারাজ তিনি। তবে বাদ দেয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, দল আমার বিকল্প যাকে মনে করেছে, তাকেই বেছে নিয়েছে। তিনি বলেন, আগে যেমন পূর্ণকালীন মহানগর বিএনপির সভাপতি হিসেবে ব্যস্ততা ছিল। এখন তা না থাকলেও আমি জনগণের পাশে আছি।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর