সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার কয়ড়া ইউনিয়নের রতনদিয়ার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষিকাকে যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে একই প্রতিষ্ঠানের সহকারী শিক্ষক শামীম আহমেদের বিরুদ্ধে।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী ওই শিক্ষিকা জানান, আমার স্বামী মানিকগঞ্জে থাকার সুবাদে প্রতি সপ্তাহে আমার স্বামীর নিকট যাই। আমার স্বামী আমার কাছে না থাকায় দীর্ঘদিন ধরে লম্পট শামীম আহমেদ আমাকে নানা রকম কুপ্রস্তাব, অশালীন আচারণ ও নানাবিধ হয়রানি করে আসছে।
যৌন হয়রানির বিষয়টি আমার বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি বরাবর লিখিত অভিযোগ দিলেও এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করেনি। উল্টো আমাকে শিক্ষা অফিসে ডেকে নিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে আপোষ করার চেষ্টা করে। শিক্ষক শামীম আহমেদের উপযুক্ত শাস্তির দাবি জানান তিনি।
স্থানীয়রা জানান, বেশ কিছুদিন আগে শিক্ষক শামীম আহমেদের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে হয়রানির অভিযোগ উঠেছিলো। আবার এখন বিদ্যালয়ের শিক্ষিকাকে যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। যদি এভাবেই প্রতিনিয়ন অভিযোগ আসতে থাকে তাহলে শিক্ষার্থীরা কিভাবে বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করবে। এলাকাবাসী শিক্ষক শামীম আহমেদের উপযুক্ত শাস্তি চায়।
এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির বিদ্যুৎসাহি সদস্য আব্দুস সায়েম বলেন, অত্র বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা ইতোমধ্যেই ম্যানেজিং কমিটি বরাবর শিক্ষক শামীমের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। কিছু দিন আগেও সহকারী শিক্ষক শামীমের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেনীর ছাত্রীকে যৌন হয়ারনীর অভিযোগ এসেছিলো। শিক্ষক শামীম মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান হওয়ায় বার বার পার পেয়ে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি রফিকুল ইসলাম বলেন, শিক্ষিকার যৌন হয়রানির লিখিত অভিযোগের এক মাস আগেও বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেনীর এক ছাত্রী শিক্ষক শামীম আহমেদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছিলো।
সেই অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি, শিক্ষক ও এলাকার কিছু গন্যমান্য লোক নিয়ে তার সুষ্ঠ বিচার করা হয়। এরপরও কিছু কিছু ঘটনার কথা শোনা যায়। শিক্ষিকার লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা একটা তারিখ ধার্য করেছিলাম। কিন্তু সেই তারিখের একদিন পূর্বে শিক্ষক শামিম আহমেদ প্রধান শিক্ষিকা ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের বলেন, আমার বাবা অসুস্থ । আপনার যে ডেট করেছেন সেই ডেটে আমার বাবাকে নিয়ে হাসপাতালে যাব। তাঁর বাবার অসুস্থতার কথা বিবেচনা করে আমরা পুনরায় আবার একটা তারিখ নির্ধারন করলেও সে উপস্থিত হয়নি। শিক্ষক শামীম আহমেদ ম্যানেজিং কমিটিকে বার বার বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাচ্ছেন। আমাদের ম্যানেজিং কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শিক্ষক শামীম আহমেদ এই বিদ্যালয় থেকে অন্য বিদ্যালয়ে চলে যাক।
যৌন হয়রানির বিষয়টি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা দিলরুবা পারভীন নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেশ কিছুদিন আগে স্কুলে এই অনাকাঙ্খাতি ঘটনাটি ঘটে। আমি ক্লাস শেষে অফিস রুমে এসে দেখি সহকারী শিক্ষক শামীম ও শিক্ষিকার মাঝে তর্কাতর্কী চলছে। আমি এসে তাদের বাকবিতান্ডা থামাই।
সহকারি শিক্ষিকা ম্যানেজিং কিমিটি বরাবর লিখিত অভিযোগ দিলে ম্যানেজিং কমিটি, শিক্ষক ও অভিভাবকদের নিয়ে একটি ডেট দিলে শিক্ষক শামীম উপস্থিত হয়নি।
বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন কিনা এমন প্রশ্নের জাবাবে তিনি বলেন, বিষয়টি প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ছানোয়ার হোসেন স্যারকে অবগত করলে শিক্ষক শামীম ও শিক্ষিকাসহ অন্য শিক্ষকদের নিয়ে শিক্ষা অফিসে যাই। ছানোয়ার স্যার আলাদা আলাদা ভাবে শিক্ষক শামীম ও শিক্ষিকার বক্তব্য শুনে তাদের মধ্যে মিলমিশ করে দেয়।
এব্যাপারে সহকারি শিক্ষক শামীম আহমেদের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
উল্লাপাড়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ছানোয়ার হোসেন বলেন, এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। কিছু মানুষের মোবাইল ফোনের মাধ্যমে আমি বিষয়টি জেনে ওই দুই শিক্ষককে আমার অফিসে ডেকে তাদের কথাগুলো শুনি। শিক্ষার বৃহত্তর স্বার্থ বিবেচনা করে তাদের মধ্যে সুরাহা করে দেই এবং তাদেরকে সময় দেওয়া হয় যাতে এই বিষয়টি আর দ্বিতীয় বার না ঘটে।
উল্লাপাড়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত ককর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম মুঠোফোনে বলেন,বিষয়টি শোনার পর ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়েছিলাম। ওই শিক্ষিকা ইউএনও এবং উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে বিষয়টি জানিয়েছেন তারা একটা সুরাহা করবে বলে জানান। যার ফলে থানায় কোন অভিযোগ করবেনা ওই শিক্ষিকা।