• শুক্রবার, ০৯ মে ২০২৫, ০৯:৪৫ পূর্বাহ্ন
শিরোনামঃ
সলঙ্গায় পাওনা টাকা চাওয়ায় দুই ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে মামলা কুষ্টিয়া সাংবাদিক ফোরাম ঢাকার নির্বাচনে সভাপতি আবু বকর সিদ্দীক,সম্পাদক রনজক রিজভী সলঙ্গা থানা ইলেকট্রিক এন্ড প্লাম্বিং সমবায় সমিতির উদ্যোগে ইফতার ও দোয়া মাহফিল অমর একুশে বইমেলা-২০২৫ এ তাজবীর সজীবের ৫ বই সলঙ্গায় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের শীতবস্ত্র বিতরণ যমুনার তীর রক্ষায় আর দুর্নীতি হবে না -বিএনপি নেতা এম এ মুহিত সলঙ্গায় সাংবাদিকের উপর যুবদল নেতার হামলা হাতিরঝিল লেক থেকে জি টিভির সাংবাদিকের মরদেহ উদ্ধার বাধ্যতামূলক অবসরে পুলিশের ঊর্ধ্বতন তিন কর্মকর্তা সিরাজগঞ্জে বিএনপি নেতাকে শোকজ চেয়ারম্যানকে অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভ ১৫ পুলিশ হত্যা, আ.লীগ সভাপতি-সম্পাদকের বিরুদ্ধে মামলা সলঙ্গায় ছাত্র-জনতার উপর হামলা,আ.লীগ নেতা গ্রেপ্তার ঝাল বেশি কাঁচামরিচে, কেজি ১ হাজার মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার তিন মাস অন্তর প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী ২৫% থেকে কমে ৫.৬% প্রশ্ন ব্যবস্থাপনায় থাকছেন না পিএসসির কর্মকর্তারা টেন মিনিট স্কুলে ৫ কোটি টাকার বিনিয়োগ বাতিল সারাদেশে মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সন্তানদের বিক্ষোভ-মানববন্ধন ধ্বংসাত্মক কাজ করলে ছাড় নয়

বাস্তবমুখী ব্যয় পরিকল্পনার পথে সরকার

সিরাজগঞ্জ টাইমস / ৬০ বার পড়া হয়েছে।
সময় কাল : শনিবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০২৩

চলমান অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলা ও উত্তরণের প্রয়োজনীয়তা বিবেচনায় নিয়ে ব্যয় সংকোচন নীতির পথে যাচ্ছে সরকার। এক দশক ধরে প্রণয়ন করা বাজেটে যে সম্প্রসারণমূলক নীতি ছিল তা থেকে এবার সরে আসছে সরকার। তাই আগামী বাজেট পরিকল্পনায় বাস্তবমুখী হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।তাঁরা এখনই আরো বাস্তবানুগ উদ্যোগ আশা করছেন।

রাজস্ব ও বৈদেশিক আয় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কমে যাওয়ায় সরকার ব্যয় কমানোর দিকে নজর দিচ্ছে। তারই অংশ হিসেবে চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের আকার কমানো হয়েছে। আগামী অর্থবছরের জাতীয় বাজেট প্রণয়ন এবং জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রার হারও কমিয়ে প্রাক্কলন করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট ৫১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা কমিয়ে ধরায় বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) বরাদ্দ এবং জিডিপির প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ব্যাপকভাবে কমাতে হয়েছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেওয়ার পাশাপাশি মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রাও বাড়িয়ে ধরার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত বাজেট মনিটরিং ও সম্পদ কমিটি এবং আর্থিক, মুদ্রা ও মুদ্রা বিনিময় হার সংক্রান্ত অর্থনৈতিক কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিলের ভার্চুয়াল বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

সরকার এখন বাজেট ঘাটতি মোকাবেলার চাপে আছে।

তা ছাড়া ডলার সংকটের কারণে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দ্রুত কমে আসছে। মূল্যস্ফীতিও বেড়ে ৯ শতাংশের ওপরে চলে গেছে। সরকারে লক্ষ্য ছিল ৬ শতাংশ রাখা। এবার তা বাড়িয়ে ৭.৫ শতাংশ করতে যাচ্ছে।

বিশ্ববাংকের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, জিডিপি প্রবৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতি বাস্তবতার কাছাকাছি নিয়ে আসা হয়েছে।

চলতি অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধির সঙ্গে সম্পৃক্ত সূচকগুলোতে প্রবৃদ্ধির ইঙ্গিত নেই। সরকারের এই পরিকল্পনা বাস্তবতার কাছে মনে হলেও তা এখনো দূরেই বলা যায়। তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি নভেম্বর শেষে ৯.৫ শতাংশের বেশি ছিল। আগামী সাত মাসে ৭.৫ শতাংশ হওয়া নিয়ে সংশয় আছে। যদি সংকোচনমূলক নীতির প্রয়োগ হয় তবেই এটা সম্ভব হবে।

কমিয়ে ধরা হয়েছে জিডিপি প্রবৃদ্ধি

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে জিডিপির আকার ৫০ লাখ ছয় হাজার ৭৮২ কোটি টাকা ধরা হয়। চলতি অর্থবছরে জিডিপির প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৭.৫ শতাংশ ধরা হলেও সংশোধিত বাজেট প্রাক্কলনে এটি কমিয়ে ৬.৫ শতাংশ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আগামী অর্থবছরের বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬.৭৫ শতাংশ ধরা হবে। এতে আগামী অর্থবছরের জিডিপির আকার হবে ৫৫ লাখ ২৮ হাজার ৬৫ কোটি টাকা।

সরকারের উন্নয়ন ও পরিচালন ব্যয়ে কৃচ্ছ্রতা, আমদানি-রপ্তানি কমে যাওয়া এবং উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে ব্যক্তি সঞ্চয় কমে গেছে। পাশাপাশি রাজনৈতিক অস্থিরতায় সরকারি-বেসরকারি বিনিয়োগের গতি কমেছে এবং সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের নেতিবাচক অবস্থার কারণে চলতি অর্থবছর প্রবৃদ্ধি কমে যাবে বলে মনে করছেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।

কমবে বাজেট ব্যয়

চলতি অর্থবছরের বাজেটের তুলনায় আগামী অর্থবছরের বাজেটের আকার মাত্র ৫.৬৭ শতাংশ বাড়ানোর চিন্তা করা হচ্ছে। স্বাভাবিক সময়ে এটা ১০ শতাংশের বেশি হারে বাড়ানো হতো। শুধুমাত্র করোনাকালীন ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটের আকারের প্রবৃদ্ধি ছিল ৬.২৮ শতাংশ। এবার তার চেয়েও কমিয়ে ধরা হচ্ছে।

চলতি অর্থবছরে বাজেটে মোট ব্যয় সাত লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা করার পরিকল্পনা ছিল। উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও অর্থনৈতিক সংকট বিবেচনায় চলতি বছরের সংশোধিত বাজেটে ব্যয় কমিয়ে সাত লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়। এটি মূল বাজেটের চেয়ে প্রায় ৭ শতাংশ কম। আগামী অর্থবছরের বাজেট ব্যয় আট লাখ পাঁচ হাজার কোটি টাকা প্রাক্কলন করা হয়েছে।

মূল্যস্ফীতির চ্যালেঞ্জ

সভায় মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার বিষয়টি বেশ প্রাধান্য পেয়েছে। চলতি বাজেটে মূল্যস্ফীতি ধরা আছে ৬ শতাংশ। এখন তা সংশোধন করে চলতি বছরে ৭.৫ শতাংশ ধরা হচ্ছে। আগামী অর্থবছরে আবার ৬.৫ শতাংশের মধ্যে রাখার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। যদিও বর্তমানে মূল্যস্ফীতি ৯.৫ শতাংশের বেশি।

অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা মনে করছেন, চলতি ডিসেম্বর মাসে মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশে নেমে আসবে, যা আগামী বছরের জুন মাসে দাঁড়াবে ৬ শতাংশে। এর মধ্য দিয়ে চলতি অর্থবছরের ১২ মাসের গড় মূল্যস্ফীতি পরিকল্পনা অনুযায়ী হবে।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্টের (র‌্যাপিড) চেয়ারম্যান ড. আব্দুর রাজ্জাক কালের কণ্ঠকে বলেন, সংকোচনমূলক নীতি ছাড়া এখন উপায় নেই। কারণ এখনো মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে। রাজস্ব আয় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক কম। আমদানি নিয়ন্ত্রণ করতে হচ্ছে। এতে বিভিন্ন খাতে উৎসাদন কমে যাওয়ার বিষয়টি লক্ষণীয়। ফলে রাজস্ব আয়ও চাপে পড়েছে। অর্থনীতি স্তিমিত থাকলে সংশোধিত রাজস্ব অর্জন কঠিন হবে।

জানতে চাইলে অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, বাস্তবে বাজেট ঘাটতি কত কম হবে এবং তা মূল্যস্ফীতি কতটা কমাবে, এটা দেখার বিষয়। তবে সরকারের সংরক্ষণমূলক নির্দেশনা ঠিক পথে আছে। এখন মূল্যস্ফীতি কমানো প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত।

চাপ সামলাতে কমেছে ঘাটতি বাজেট

সামষ্টিক অর্থনীতির বর্তমান অবস্থা বিবেচনায় রেখে চলতি অর্থবছরের বাজেটের ঘাটতি কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। চলতি অর্থবছরের বাজেটে দুই লাখ ৬১ হাজার কোটি টাকার ঘাটতির কথা বলা হয়। বর্তমান পরিস্থিতিতে ঘাটতি মেটাতে স্থানীয় পর্যায় কিংবা বৈদেশিক সহায়তা দুটোতেই টান পড়েছে। এ কারণে সংশোধিত বাজেটে ঘাটতি কমিয়ে দুই লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকা ধরার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আগামী অর্থবছরেও এই ঘাটতি তুলনামূলক কম, অর্থাৎ দুই লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা ধরা হবে।

নতুন অর্থবছরের বাজেটে বিদ্যুৎ খাতে কোনো ভর্তুকি না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অর্থ বিভাগ। এতে বিভিন্ন শিল্পের পণ্য উৎসাদন ব্যয় বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। যদিও কৃষিতে ভর্তুকি অব্যাহত রাখার পরিকল্পনা আছে।

আগামী অর্থবছরের বাজেট পরিকল্পনা নিয়ে জাহিদ হোসেন বলেন, অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা ও বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতি কিভাবে মোকাবেলা করা হবে, সেটাই বড় প্রশ্ন। এবার সামষ্টিক অর্থনীতির ওপর চাপ আছে। মূল্যস্ফীতি কতটা নিয়ন্ত্রণে আসবে। এসবের ওপর নির্ভর করেই চলতি অর্থবছরের প্রবৃদ্ধি হবে। আর এ বছরের অর্জনের ওপর নির্ভর করে আগামী অর্থবছরের পরিকল্পনা করতে হবে।

বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে কাটছাঁট

আশানুরূপ বৈদেশি সহায়তা না আসায় বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে বরাদ্দ কমানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। চলতি অর্থবছরের বাজেটে এডিপি বরাদ্দ ছিল দুই লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে তা কমিয়ে দুই লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছে। এডিপিতে ১৮ হাজার কোটি টাকা কাটছাঁট করা হয়েছে।

পিআরআইয়ের গবেষণা পরিচালক এম এ রাজ্জাক বলেন, সরকারের খরচ কমানো সব সময় খারাপ নয়। সংকোচন নীতি গ্রহণ করা হলেও গুণগত মানের ব্যয় করে উন্নয়ন করতে পারলে তাতেও ভালো করা যাবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে উন্নয়ন ব্যয় কমিয়ে সামাজিক সুরক্ষা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে নজর দিতে হবে। সব মিলিয়ে এখন মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনতে পারলেই সফল হওয়া সম্ভব।

পিছিয়ে পড়েছে রাজস্ব আয়

২০২৩-২৪ সালের বাজেটে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল পাঁচ লাখ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে চার লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছে। আগামী অর্থবছরে প্রাক্কলন করা হয়েছে পাঁচ লাখ ৫৫ হাজার কোটি টাকা। এতে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়বে ৫৫ হাজার কোটি টাকা।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর