• সোমবার, ১৯ মে ২০২৫, ০২:৩৩ পূর্বাহ্ন
শিরোনামঃ
সলঙ্গায় পাওনা টাকা চাওয়ায় দুই ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে মামলা কুষ্টিয়া সাংবাদিক ফোরাম ঢাকার নির্বাচনে সভাপতি আবু বকর সিদ্দীক,সম্পাদক রনজক রিজভী সলঙ্গা থানা ইলেকট্রিক এন্ড প্লাম্বিং সমবায় সমিতির উদ্যোগে ইফতার ও দোয়া মাহফিল অমর একুশে বইমেলা-২০২৫ এ তাজবীর সজীবের ৫ বই সলঙ্গায় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের শীতবস্ত্র বিতরণ যমুনার তীর রক্ষায় আর দুর্নীতি হবে না -বিএনপি নেতা এম এ মুহিত সলঙ্গায় সাংবাদিকের উপর যুবদল নেতার হামলা হাতিরঝিল লেক থেকে জি টিভির সাংবাদিকের মরদেহ উদ্ধার বাধ্যতামূলক অবসরে পুলিশের ঊর্ধ্বতন তিন কর্মকর্তা সিরাজগঞ্জে বিএনপি নেতাকে শোকজ চেয়ারম্যানকে অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভ ১৫ পুলিশ হত্যা, আ.লীগ সভাপতি-সম্পাদকের বিরুদ্ধে মামলা সলঙ্গায় ছাত্র-জনতার উপর হামলা,আ.লীগ নেতা গ্রেপ্তার ঝাল বেশি কাঁচামরিচে, কেজি ১ হাজার মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার তিন মাস অন্তর প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী ২৫% থেকে কমে ৫.৬% প্রশ্ন ব্যবস্থাপনায় থাকছেন না পিএসসির কর্মকর্তারা টেন মিনিট স্কুলে ৫ কোটি টাকার বিনিয়োগ বাতিল সারাদেশে মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সন্তানদের বিক্ষোভ-মানববন্ধন ধ্বংসাত্মক কাজ করলে ছাড় নয়

খুলছে আরেক স্বপ্নদুয়ার

সিরাজগঞ্জ টাইমস / ৬৪ বার পড়া হয়েছে।
সময় কাল : শুক্রবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

জোয়ার ভাটা নিয়ে প্রবহমান কর্ণফুলী নদী। লুসাই পাহাড় থেকে নেমে আসা ঝর্ণাধারায় এই নদী মিশে গেছে বঙ্গোপসাগরে। চট্টগ্রামের এ নদীর তলদেশ দিয়ে নির্মিত হয়েছে স্বপ্ন দিয়ে গড়া বঙ্গবন্ধু টানেল, অর্থাৎ সুড়ঙ্গ পথ। বর্তমান সরকারের চ্যালেঞ্জিং একটি মেগা প্রকল্প। দেশের জন্য তো প্রথমই। আবার দক্ষিণ এশিয়ায়ও প্রথম।

কর্ণফুলী নদীর উত্তর ও দক্ষিণ প্রান্তকে সংযোগ ঘটানো এ সুড়ঙ্গ পথ দেশের অর্থনৈতিক কর্মকা-ের ব্যাপক অগ্রগতির হাতছানি দিচ্ছে। এ টানেল চট্টগ্রামকে পরিণত করবে ওয়ান সিটি টু টাউনে। এ টাউন নিয়ে গড়ে উঠবে এ অঞ্চলের আগামীর নতুন ভবিষ্যৎ। এতে বর্তমান সরকারের আওতায় কল্যাণকর ছোট-বড় বহু প্রকল্পের সঙ্গে খুলে যাচ্ছে দেশের নতুন আরেকটি স্বপ্নদুয়ার।

শুরুতে এটি ছিল বিস্ময়কর একটি স্বপ্ন। অব্যাহত কাজের অগ্রযাত্রায় সে স্বপ্নের বাস্তবায়ন ঘটেছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নামে এ টানেলের শতভাগ কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। এখন চলছে উদ্বোধন পর্বের জোর প্রস্তুতি। আগামী ২৮ অক্টোবর এ টানেলের উদ্বোধনের দিনক্ষণ ঠিক হয়েছে। এতে থাকতে পারেন দেশী-বিদেশী বিভিন্ন মেহমান। বাংলাদেশ সেতু বিভাগ (বিবিএ) উদ্বোধন পর্বের বিভিন্ন রূপরেখা প্রণয়নে এখন ব্যস্ত। টানেলের দক্ষিণ অর্থাৎ আনোয়ারা প্রান্ত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের জন্য চিহ্নিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওইদিন সশরীরে হাজির হয়ে টানেল উদ্বোধনের ঘোষণা দেবেন বলে সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ইতোমধ্যে জানান দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী ওইদিন আনোয়ারা প্রান্তে একটি জনসভাও করবেন বলে কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে।

দেশের জন্য গৌরবের এ বঙ্গবন্ধু টানেল। কারিগরি সিভিল ও ইলেক্ট্রনিকস সকল কাজ সম্পন্ন হয়েছে গত জুলাই মাসে। আর এরই মধ্যে প্রকল্পে প্রিকমিশনিং, কমিশনিং ও ট্রায়াল রানের  কাজও সফলতার সঙ্গে সমাপ্তি হয়েছে। সেতু বিভাগের কাছে এ প্রকল্প ইতোমধ্যে হস্তান্তরিত হয়েছে। আবার সেতু বিভাগ প্রকল্পের মেইনটেনেন্স ও অপারেশনাল কাজের জন্য চায়না কমিউনিকেশনস অ্যান্ড কনস্ট্রাকশনস কোম্পানি লি. (সিসিসিসিএল)-এর সঙ্গে চুক্তিও সম্পাদন করেছে। উল্লেখ করা যেতে পারে, সিসিসিসিএল এ টানেল নির্মাণ কাজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। আগামী পাঁচ বছর পর্যন্ত সিসিসিসিএল টানেল অপারেশন অর্থাৎ টোল আদায়  মেইনটেনেন্স কাজের দায়িত্ব পালন করবে।

টানেল প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী হারুনুর রশীদ চৌধুরী বৃহস্পতিবার জনকণ্ঠকে জানান, টানেল এখন উদ্বোধনের জন্য সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুত। তিনি জানান, টানেলের দুই প্রান্তে অর্থাৎ উত্তরে চট্টগ্রাম মহানগরীর পতেঙ্গা ও দক্ষিণে আনোয়ারা উপজেলা প্রান্তে উড়াল সেতু, অ্যাপ্রোচ রোড ও ওয়েস্টেশন (নিরাপত্তা তদারকি পয়েন্ট), টোল প্লাজা প্রতিষ্ঠা হয়েছে। টানেলের যান চলাচল  উন্মুক্তকরণে এখন প্রস্তুত। তবে এ প্রকল্পের মেয়াদ থাকবে আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত।

উল্লেখ করা যেতে পারে, চীনের সাংহাই শহরের মতো চট্টগ্রামকে ওয়ান সিটি টু টাউনে পরিণত করার সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল নির্মিত হয়েছে। দেশে পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্রবন্দরসহ সরকারের এটিও একটি মেগা প্রকল্প।

কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে সুড়ঙ্গ পথ তৈরি করতে হবে। সঙ্গত কারণে এ কাজ ছিল ব্যতিক্রমী এবং চ্যালেঞ্জিংও বটে। মহানগরীর পতেঙ্গা পয়েন্ট থেকে আনোয়ারা পর্যন্ত টানেলের মূল দৈর্ঘ্য ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার। টানেল অভ্যন্তরে নির্মিত হয়েছে দুটি টিউব। প্রতিটি টিউবে রয়েছে দুটি করে চার লেন। মাঝপথে রয়েছে তিনটি ক্রস প্যাসেজ। সম্ভাব্য যে কোনো দুর্ঘটনায় উদ্ধার তৎপরতার সহায়ক হিসেবে এই ক্রসপ্যাসেজ নির্মিত হয়েছে। অপরদিকে, টানেলের উভয় প্রান্তে রয়েছে ওয়েস্টেশন ও অ্যাপ্রোচ রোড। আনোয়ারা প্রান্তে স্থাপন হয়েছে টোলপ্লাজা ও উড়াল সেতু ৭২৭ মিটারের। আর অ্যাপ্রোচ রোড ৫ দশমিক ২৮ কিলোমিটারের। আর পতেঙ্গা প্রান্তের রয়েছে ৫৫০ মিটারের অ্যাপ্রোচ রোড। প্রকল্প দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, কর্ণফুলী নদীর মাঝ বরাবর ৩৬ মিটার ও উভয় প্রান্তে ১৮ মিটার গভীরতায় টানেল নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। টানেল অভ্যন্তরে রয়েছে অগ্নিপ্রতিরোধক বোর্ড, ডেকোরেটিং বোর্ড। টানেলের দুই প্রান্তে একটি করে ১৫ মেগাওয়াটের দুটি বৈদ্যুতিক সাবস্টেশন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।

উল্লেখ করা যেতে পারে, এ টানেল নির্মাণ কাজের মহাযজ্ঞ শুরু হয় ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি। পতেঙ্গা থেকে দক্ষিণ প্রান্তে আনোয়ারা পর্যন্ত প্রথম টিউবের খনন কাজ সম্পন্ন হয় ২০২০ সালের ২ আগস্ট। একই বছরের ১২ ডিসেম্বর আনোয়ারা থেক পতেঙ্গামুখী দ্বিতীয় টিউবের কাজ শুরু হয়ে পরবর্তী বছরের ৭ অক্টোবর তা সম্পন্ন হয়। এরপর শুরু হয় পূর্ত ও ইলেক্ট্রমেকানিক্যাল কাজ।

প্রকল্পের শুরুতে ব্যয় ধরা হয় ৮ হাজার ৪৪৭ কোটি টাকা। পরে ডলারের মূল্য বৃদ্ধিসহ বিশ^জুড়ে সৃষ্ট কোভিড ও অন্যান্য কারণে প্রয়োজনীয় নির্মাণসামগ্রীর দাম বেড়ে যায়। ফলে প্রকল্প ব্যয় বেড়ে ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকায় উন্নীত হয়। পুরো প্রকল্পে চীনের এক্সিম ব্যাংক স্বল্প অর্থাৎ ২ শতাংশ সুদে ঋণ সহায়তা দিচ্ছে ৫ হাজার ৯১৩ কোটি ১৯ লাখ টাকা। অবশিষ্ট অর্থ জোগান দিচ্ছে সরকার। অর্থাৎ ৪ হাজার ৪৬১ কোটি ২৩ লাখ টাকা।

প্রকল্পের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, উদ্বোধনের পর তিন বছরে যানবাহন চলবে ৭৬ লাখ। চলবে কন্টেনারবাহী ট্রেইলর, ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, বাস, মিনিবাস, মাইক্রোবাস, প্রাইভেট কার, জিপ ও ছোট আকৃতির নানা যানবাহন। তবে মোটরসাইকেল  থ্রি হুইলার চলাচল নিষিদ্ধ থাকবে। শুরুর দিকে বছরে গড়ে ১৭ হাজার যান  চলাচল অনুমিত হয়েছে। আগামী ২৮ সালের মধ্যে দৈনিক ২৮ হাজার এবং  ২০৩০ সাল নাগাদ ৩৮ হাজার যান চলাচল করবে বলে প্রকল্পের ধারণা রয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে কক্সবাজারমুখী যানবাহন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক হয়ে টানেল অভ্যন্তর দিয়ে চলে যাবে আনোয়ারা প্রান্তে। সেখানে পিআইবি সড়ক হয় যানবাহন উঠে যাবে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়ক তথা আরাকান সড়কে।

বঙ্গবন্ধু টানেলকে দেশের সমৃদ্ধির জন্য নতুন একটি উল্লেখযোগ্য দিক হিসেবে বিবেচনায় আনা হয়েছে।  টানেল প্রতিষ্ঠার পর বাণিজ্য নগরী চট্টগ্রামের আরও বিস্তৃতি ঘটবে। ব্যবসা ও শিল্পে ঘটবে সমৃদ্ধি। অর্থনীতির ভিত হবে আরও মজবুত। এ ছাড়া উত্তর প্রান্তে অবস্থিত আনোয়ারা উপজেলা একটি উপশহরে রূপ নেবে। আনোয়ারায় আগে থেকে রয়েছে বহুজাতিক কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি (কাফকো), চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড (সিইউএফএল), কোরিয়ান ইপিজেড (কেইপিজেড), মেরিন একাডেমিসহ বিভিন্ন স্থাপনা। এ ছাড়া সেখানকার গহিরায় প্রতিষ্ঠা হচ্ছে চায়না ইকোনমিক জোন। এ জোন প্রতিষ্ঠা হলে সেখানে হবে ১৭১টি শিল্প-কারখানা। কর্মসংস্থান ঘটবে লক্ষাধিক মানুষের। টানেল সৃষ্টির ফলে চট্টগ্রামের সঙ্গে কক্সবাজারের দূরত্ব কমবে ১৫ কিলোমিটারের বেশি।

উল্লেখ করা যেতে পারে, ২০১০ সালে প্রধানমন্ত্রী কর্ণফুলীর তলদেশে টানেল নির্মাণের ঘোষণা দেন। ২০১৪ সালে চীন সফরে গেলে সেখানে চীনা প্রেসিডেন্ট সি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠক শেষে দুদেশের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীনা প্রসিডেন্ট সি জিনপিং যৌথভাবে টানেল বোরিং কাজের উদ্বোধন করেন।

এদিকে জনকণ্ঠের আনোয়ারা সংবাদদাতা ইমরানুল হক জানিয়েছেন, কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে বহুল প্রত্যাশিত ও স্বপ্নের বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণ বাস্তবে রূপ পেয়েছে। এখন উদ্বোধনের অপেক্ষায়। প্রত্যাশিত এই টানেলের সংযোগ পথের এক প্রান্ত হচ্ছে শিল্প জোন হিসেবে পরিচিত দক্ষিণ চট্টগ্রামের প্রবেশপথ আনোয়ারা উপজেলা। টানেলের প্রবেশমুখ সিইউএফএল রাঙ্গাদিয়া পয়েন্ট থেকে শাহাদাতনগর জেলেঘাটা পর্যন্ত ৭২৭ মিটারের একটি উড়াল সড়ক এবং সেখান থেকে পিএবি সড়কের চাতরী চৌমুহনী বাজারের দক্ষিণ দিক পর্যন্ত চার কিলোমিটার সংযোগ সড়কের কাজ সম্পূর্ণ শেষ হয়েছে। টানেলের ভেতর দিয়ে এখন যানবাহন চলাচলের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত। এদিকে,  টানেলের সংযোগ সড়কের সঙ্গে সংযুক্ত করতে কর্ণফুলীর শিকলবাহা ওয়াই জংশন থেকে আনোয়ারা কালাবিবির দীঘি পর্যন্ত প্রায় ৮ দশমিক ১ কিলোমিটারের ছয় লাইন সড়কের কাজও শেষের পথে।

বঙ্গবন্ধু টানেলকে ঘিরে পাল্টে গেছে আনোয়ারা-কর্ণফুলীসহ পুরো দক্ষিণ চট্টগ্রামের চিত্র। বিশেষ করে সরকারের মেগা প্রকল্পসমূহ উন্নয়নের পরিবর্তনের ছোঁয়ায় বদলে যাচ্ছে আনোয়ারার অর্থনীতির দৃশ্যপট। পরিবর্তন ঘটছে এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থায়। ভৌগোলিক কারণে একদিকে সমুদ্র বন্দরের পাশে অন্যদিকে বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণের ফলে আনোয়ারা হবে আন্তর্জাতিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠ এক মাধ্যম। ফলে আনোয়ারা উপজেলায় বাড়ছে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক কর্মকা-।

কর্ণফুলী টানেলের সঙ্গে সংযুক্ত করতে ৩৯০ কোটি টাকা ব্যয়ে কর্ণফুলীর শিকলবাহা ওয়াই জংশন থেকে আনোয়ারা কালাবিবির দীঘি পর্যন্ত সাড়ে ১১ কিলোমিটার সড়ক ছয় লাইনে উন্নীত করছেন সড়ক ও জনপথ বিভাগ। এরই মধ্যে এই সড়কের দু’পাশে বিপুল পরিমাণে গড়ে উঠছে নতুন নতুন শিল্প-কারখানা এবং বাণিজ্যিক স্থাপনা। বিশেষ করে সেন্টার-চাতরী চৌমুহনী থেকে কালাবিবির দীঘির মোড় পর্যন্ত এই এলাকাটা টানেলের মূল সড়ক, কর্ণফুলীর ওয়াই জংশন থেকে ছয় লেনের সংযোগ সড়ক, চায়না ইকোনমিক জোনের মূল সড়ক সবকিছুই এসে মিলিত হওয়ায় এই এলাকায় চলছে ব্যাপক আর্থিক ও বাণিজ্যিক কর্মযজ্ঞ। দিনরাত চলছে সরকারি-বেসরকারি উন্নয়ন কর্মকা-। শিল্প-কারখানা চালুর উদ্যোগ নিয়ে কাজ করছেন ব্যবসায়ীরা। এতে বিনিয়োগ হবে হাজার কোটি টাকা। শিল্প ও ব্যবসায়ী গ্রুপগুলোর জমি কেনার প্রতিযোগিতা এই এলাকায়। মাত্র দুই বছরের ব্যবধানে জমির দাম বেড়ে গেছে ১০ গুণেরও বেশি। ব্যবসায়িক কর্মকা- বৃদ্ধির কারণে শুরু হয়েছে বাণিজ্যিক ব্যাংকের শাখা খোলার হিড়িকও।

সরেজমিনে কালাবিবির দীঘি থেকে চাতরী চৌমুহনী পর্যন্ত সড়কটি ঘুরে দেখা যায়, গত দুই বছরে বদলে গেছে এই এলাকাটির চিত্র।  যেখানে বছর দুয়েক আগেও দু’তলা ভবনও ছিল না সেই কালাবিবির দীঘি এলাকায় গত দুই বছরে নির্মিত হয়েছে অন্তত ২০টি বাণিজ্যিক ও আবাসিক বহুতল ভবন। নির্মাণাধীন রয়েছে অন্তত ১০টি বানিজ্যিক ভবন। গড়ে উঠেছে ক্লিনিক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বাণিজ্যিক কমপ্লেক্স, উন্নত মানের রেস্টুরেন্ট, কমিউনিটি সেন্টার। অ্যাপ্রোচ রোড সড়কের কাছাকাছি এলাকায় প্রায় এক একর জায়গাজুড়ে গড়ে উঠেছে বিশাল পোশাক কারখানা এইচএস কম্পোজিড টেক্সটাইল। আশা করা হচ্ছে এই পোশাক কারখানায় তিন থেকে পাঁচ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে।

সূত্রে জানা গেছে, বঙ্গবন্ধু টানেলের পরবর্তীতে কর্ণফুলী ও আনোয়ারা উপজেলায় কারখানা স্থাপনের লক্ষ্যে জমি ক্রয় করেছে দেশের শীর্ষস্থানীয় বিভিন্ন শিল্প গ্রুপ। এদিকে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে পাল্লা দিয়েছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোও। প্রবাসী রেমিটেন্স ও শিল্প কারখানায় বিনিয়োগ, আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের সম্ভাবনার দিকে ঝুঁকছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো।

বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা এসএম মঈন উদ্দিন আজাদ নামের বেসরকারি এক ব্যাংক কর্মকর্তা জানান, আনোয়ারায় আগে থেকে প্রায় ২০টি  বাণিজ্যিক ব্যাংকের শাখা ছিল। মাসখানেকের মধ্যে নতুন করে আরও ৩টি ব্যাংকের শাখা যুক্ত হয়েছে। আনোয়ারা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান তৌহিদুল হক চৌধুরী জানান, টানেল নির্মাণের ফলে আনোয়ারা মডেল উপশহরে পরিণত হচ্ছে। রাতারাতি বেড়ে গেছে জমির দাম। টানেলের ছোঁয়ায় এই এলাকাটি এখন স্বর্ণ পরিণত হয়েছে।

ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন, টানেল চালু হলে দক্ষিণ চট্টগ্রামের আনোয়ারা-কর্ণফুলী হবে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্নদুয়ার। এটি বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে এগিয়ে নেওয়ার রোডম্যাপ। তাই টানেলের আশপাশের এলাকায় নতুন শিল্প-কারখানা স্থাপন, বাণিজ্যিক ব্যাংকের নতুন শাখা খোলাসহ ব্যাপক বাণিজ্যিক কর্মকা- চলছে। এর মাধ্যমে শুধু চট্টগ্রাম বা বাংলাদেশ সুবিধা পাবে তা নয়, এশিয়ান সড়ক নেটওয়ার্ক ও পূর্বমুখী বাণিজ্য সম্প্রসারিত হবে। কর্ণফুলীর শিকলবাহা ক্রসিং থেকে কালাবিবির দীঘির মোড় পর্যন্ত সড়ক ৪ লেনে উন্নীত করা হয়েছে। ফলে আনোয়ারা উপজেলা থেকে চট্টগ্রাম শহরে ১০-১৫ মিনিটের মধ্যেই চট্টগ্রাম শহরেই পৌঁছানো যাচ্ছে। যেখানে পূর্বে পৌঁছাতে ঘণ্টাখানেক সময় লাগত। এ নিয়ে দক্ষিণ চট্টগ্রামের আনোয়ারা, চন্দনাইশ, বাঁশখালী এবং কক্সবাজার জেলার পেকুয়া, মহেশখালী, চকরিয়া, কুতুবদিয়ার যাত্রীদের মাঝে স্বস্তি কাজ করছে।

দক্ষিণ চট্টগ্রামের প্রবেশমুখ চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলা। একদিকে কেইপিজেড, সিইউএফএল, ডিএপিএফসিএল, কাফকো, সাদ মূসা ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক, চায়না ইকোনমিক জোনসহ বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান স্থাপনের মধ্য দিয়ে এই উপজেলাটি বাণিজ্যিক উপজেলায় রূপ নিচ্ছে। অপরদিকে দেশের দ্বিতীয় বৃহৎ পারকি সমুদ্র সৈকত, মোহছেন আউলিয়ার মাজার, প্যারাবন, গহিরা মৎস্য আহরণসহ বিভিন্ন প্রাচীন নিদর্শনের কারণে এটি পর্যটন এলাকা হিসেবে পরিচিতি লাভ করছে। সর্বশেষ আগামী ২৮ অক্টোবর খুলছে দেশের প্রথম বঙ্গবন্ধু টানেলের দুয়ার।

যার ফলে আনোয়ারা রূপ নেবে চীনের সিংহাই শহরের আদলে ওয়ান সিটি টু টাউনে। তাই বোঝা যাচ্ছে ব্যস্ততা এবং গুরুত্বের দিক দিয়ে আনোয়ারা কোনো অংশে পিছিয়ে নেই। আর উন্নত জীবনযাত্রার প্রধান উপাদান হচ্ছে উন্নত যাতায়াত ব্যবস্থা। যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নতির জন্য ৪০৭ কোটি টাকা ব্যয়ে এই টানেল সংযোগ সড়কটি ছয় লেনে উন্নতি করার কথা থাকলেও ভূমি অধিগ্রহণে নানা জটিলতার কারণে আপাতত ৪ লেনের কাজ সমাপ্ত করা হচ্ছে। এরই মাঝে শেষ হয়েছে মূল সড়কের ২১টি কালভার্টের কাজ।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর