• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৫:৪৩ অপরাহ্ন
শিরোনামঃ
এবার চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় জ্বালানি তেল যাবে পাইপ লাইনে কাতারের আমির আসছেন সোমবার রাজস্ব ফাঁকি ঠেকাতে ক্যাশলেস পদ্ধতিতে যাচ্ছে এনবিআর বাংলাদেশে দূতাবাস খুলছে গ্রিস বঙ্গবন্ধু টানেলে পুলিশ-নৌবাহিনী-ফায়ার সার্ভিসের জরুরি যানবাহনের টোল মওকুফ সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীতে আসছেন আরও ৪ লাখ মানুষ ৫০ বছরে দেশের সাফল্য চোখে পড়ার মতো চালের বস্তায় জাত, দাম উৎপাদনের তারিখ লিখতেই হবে মন্ত্রী-এমপির প্রার্থীদের সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ প্রাণী ও মৎস্যসম্পদ উন্নয়নে বেসরকারি খাত এগিয়ে আসুক ফের আশা জাগাচ্ছে লালদিয়া চর কনটেইনার টার্মিনাল ‘মাই লকারে’ স্মার্টযাত্রা আগামী সপ্তাহে থাইল্যান্ড সফরে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতির ওপর নজর রাখার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর ব্যাংকের আমানত বেড়েছে ১০.৪৩ শতাংশ বঙ্গবাজারে দশতলা মার্কেটের নির্মাণ কাজ শুরু শিগগিরই বেঁচে গেলেন শতাধিক যাত্রী ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস আজ মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব না খাটানোর নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর মুজিবনগর দিবসে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী

রাত সাড়ে ১০টায় এক মিনিট অন্ধকার থাকবে দেশ

সিরাজগঞ্জ টাইমস / ৮০ বার পড়া হয়েছে।
সময় কাল : শনিবার, ২৫ মার্চ, ২০২৩

আজ বাঙালির বিভীষিকাময় ২৫ মার্চের সেই ভয়াল কালরাত। মুক্তিযুদ্ধ শুরুর মুহূর্তে ১৯৭১ সালের এই কালরাতেই পৃথিবীর ইতিহাসের ভয়াবহতম গণহত্যার শিকার হয় স্বাধীনতাকামী বাংলাদেশের মানুষ। সেদিন রাতে রাজধানী ঢাকায় জাগ্রত মুক্তিকামী ছাত্র-জনতা থেকে ঘুমন্ত নিরীহ মানুষকে নির্বিচারে হত্যার জন্য ট্যাঙ্ক ও সাঁজোয়া বহর নিয়ে পথে নামে সশস্ত্র পাকিস্তান সেনাবাহিনী। হিংস্র শ্বাপদের মতো ধেয়ে যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে পুলিশ ও ইপিআর ব্যারাকের দিকে। শুরু হয় পাকিস্তানিদের সুপরিকল্পিত কুখ্যাত ‘অপারেশন সার্চলাইট’। এক রাতেই সেদিন বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে গণহত্যার শিকার হয় লাখো বাঙালি।

এই মর্মন্তুদ গণহত্যা এখনও বিশ্বের মানুষের কাছে ঘৃণ্যতম ও তমসাচ্ছন্ন এক অধ্যায়। ২০১৭ সালে এই জঘন্য গণহত্যা স্মরণে ২৫ মার্চকে ‘জাতীয় গণহত্যা দিবস’ ঘোষণা করা হয়েছে।

এ উপলক্ষে আজ শনিবার কালরাতে গণহত্যা স্মরণে দেশব্যাপী এক মিনিট নীরবতা পালনের কর্মসূচি নিয়েছে সরকার। কেপিআইভুক্ত এলাকা ছাড়া সারাদেশের মানুষ রাত ১০টা ৩০ থেকে ১০টা ৩১ মিনিট পর্যন্ত ১ মিনিট দাঁড়িয়ে সব আলো নিভিয়ে একসঙ্গে নীরবতা পালন করবে। দিনটি উপলক্ষে পৃথক বাণীতে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভয়াল সেই রাতে গণহত্যার শিকার অগণিত শহীদকে স্মরণ করেছেন।

একাত্তরের মার্চজুড়েই অশান্ত ছিল পুরো দেশ। এর মধ্যে পঁচিশে মার্চের সকাল থেকেই অজানা আশঙ্কায় দিন কেটেছে বাঙালির। সেদিন এমনি এক পরিস্থিতিতে এক সময় বেতারের প্রচার বন্ধ করে  দেওয়া হয়। সরকারি কোনো ঘোষণাও প্রচারিত হয়নি। সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত পর্যন্ত মিছিল-মিটিং-স্লোগানে মুখরিত প্রাদেশিক রাজধানী ঢাকাবাসীর প্রায় সবাই ঘুমিয়ে পড়েন এক সময়।

নিরীহ-নিরস্ত্র মানুষের কেউই ঘুণাক্ষরে জানতে পারেনি, ততক্ষণে খুলে গেছে নরকের দরজা। রাত সাড়ে ১১টায় ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট থেকে প্রথম রাস্তায় নেমে আসে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। তারা প্রথমে ঢাকার রাজারবাগ পুলিশ লাইন এবং পরে একে একে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ধানমন্ডি ও পিলখানা পূর্ব পাকিস্তান রাইফেলস (ইপিআর) সদরদপ্তরসহ রাজধানীর সর্বত্র আক্রমণ চালিয়ে নৃশংস হত্যাযজ্ঞ শুরু করে। একই সময়ে তাদের নিধনযজ্ঞ চলে চট্টগ্রামসহ দেশের কয়েকটি বড় শহরেও।

রাজারবাগ পুলিশ সদরদপ্তর পাকিস্তানি সেনাদের সাঁড়াশি আক্রমণের মুখেও বাঙালি পুলিশ সদস্যরা আত্মসমর্পণ করেননি। রাইফেল তাক করে প্রতিরোধ গড়ে তোলে তারা। কিন্তু শত্রুর ট্যাঙ্ক আর ভারী মেশিনগানের ক্রমাগত গুলির মুখে এক সময় গুঁড়িয়ে যায় সব ব্যারিকেড-প্রতিরোধ। গ্যাসোলিন ছিটিয়ে আগুনে ভস্মীভূত করা হয় পুলিশ সদরদপ্তর। সেখান থেকে ঘাতক বাহিনী এগোতে থাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার দিকে। পরে রাতভর পুরো রাজধানীতেই নিরীহ নিরস্ত্র ঘুমন্ত বাঙালির ওপর পৈশাচিক উন্মত্ততায় ঝাঁপিয়ে পড়ে পাকিস্তানি সেনারা।

তখনও মুজিব-ইয়াহিয়া বৈঠকসহ স্বাধীনতার দাবিতে বাঙালির বিক্ষোভে উত্তাল জনপদের খবর সংগ্রহ করতে ঢাকায় আসা বিদেশি সাংবাদিকরা অবস্থান করছিলেন শাহবাগের হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে । এ হোটেলের ১২তলায় দেহরক্ষীদের কড়া পাহারায় ঘুমাচ্ছিলেন পাকিস্তানি পিপলস পার্টির প্রধান জুলফিকার আলী ভুট্টো। রাত পৌনে ১২টায় পাকিস্তানি  সেনারা হোটেলটি ঘিরে ফেলে এবং কেউ  বের হলেই গুলির নির্দেশ  দেয়। এভাবেই বাইরের পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন করে  দেওয়া হয় ঢাকাকে।

এর পরপরই রাতের নিস্তব্ধতা ভেঙে নগরজুড়ে ভেসে আসতে শুরু করে পাকিস্তানি সেনাদের ট্যাঙ্ক, মেশিনগান ও রিকয়েললেস রাইফেলের গুলি এবং মর্টারের শব্দ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকবাল হল ও জগন্নাথ হলসহ সব হলেই নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালায় তারা। পাকিস্তানি হায়েনাদের কবল থেকে রক্ষা পাননি রোকেয়া হলের ছাত্রীরাও। এক রাতে তিন শতাধিক ছাত্রছাত্রী শহীদ হন। নৃশংসভাবে শাহাদাতবরণ করতে হয় ড.  গোবিন্দ চন্দ্র দেব, ড. জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা, অধ্যাপক সন্তোষ ভট্টাচার্য, ড. মনিরুজ্জামানসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের ৯জন শিক্ষককে। মানুষের আর্তনাদে ভারি হয়ে ওঠে আকাশ-বাতাস। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বড় হয়েছে লাশের স্তূপ। এক সময় গোটা নগরীই পরিণত হয় লাশের শহরে। অবশ্য এ পরিস্থিতিতেও রাস্তায় রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন বাঙালি ছাত্র-জনতা। তবে এরপরও বাঙালি মনোবল হারায়নি। কারণ ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে গ্রেপ্তারের আগ মুহূর্তে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দেন।

শুরু হয় বাঙালির সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ। ২৫ মার্চ পরবর্তী ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে হত্যা করা হয় ৩০ লাখ মানুষকে। ধর্ষিত হয় সাড়ে তিন লাখেরও বেশি নারী। আজ ২৫ মার্চের সেই কালরাতে শহীদের স্মরণে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে তাঁদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে।

কর্মসূচি: গণহত্যা স্মরণে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের যৌথ উদ্যোগে সকাল ১০টায় বাংলাদেশের গণহত্যা ১৯৭১ শীর্ষক সেমিনার আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম উপস্থিত থাকবেন। আওয়ামী লীগ দুপুর ২টায় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে দলীয় কার্যালয়ে আয়োজন করেছে আলোচনা সভা। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখবেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

এ ছাড়া একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির উদ্যোগে রাত ৯টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে ৫৩টি মোমবাতি প্রজ্বালন, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের উদ্যোগে ঢাকার আগারগাঁও মিলনায়তনে সন্ধ্যায় জাদুঘরের শিখা চিরঅম্লান প্রাঙ্গণে মোমবাতি প্রজ্বালন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম, গণহত্যা জাদুঘর, জাতীয় প্রেস ক্লাব, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিসহ বিভিন্ন সংগঠনের মোমবাতি প্রজ্বালনসহ নানা কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে। একইভাবে ঢাকার বাইরেও দেশের বিভিন্ন স্থানে গণহত্যা দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা এবং গণহত্যা ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক নীতিনাট্য ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়, শিল্পকলা একাডেমি, শিশু একাডেমি, জেলা প্রশাসক এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা এসব অনুষ্ঠান বাস্তবায়ন করবেন।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর