• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৮:৫৬ পূর্বাহ্ন
শিরোনামঃ
ব্যাংকের আমানত বেড়েছে ১০.৪৩ শতাংশ বঙ্গবাজারে দশতলা মার্কেটের নির্মাণ কাজ শুরু শিগগিরই বেঁচে গেলেন শতাধিক যাত্রী ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস আজ মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব না খাটানোর নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর মুজিবনগর দিবসে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী সলঙ্গায় ১০৭ বছরেও জীবন যুদ্ধ শেষ হয়নি বৃদ্ধা ডালিম খাতুনের দ্বাদশ সংসদের দ্বিতীয় অধিবেশন বসছে ২ মে আপাতত মার্জারে যাচ্ছে ১০ ব্যাংক, এর বাইরে নয়: বাংলাদেশ ব্যাংক রাজধানীর অতি ঝুঁকিপূর্ণ ৪৪ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভবন খালির নির্দেশ চলতি অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হবে ৬.১ শতাংশ কৃচ্ছ্রসাধনে আগামী বাজেটেও থোক বরাদ্দ থাকছে না নতুন যোগ হচ্ছে ২০ লাখ দরিদ্র প্রার্থী হচ্ছেন বিএনপি জামায়াত নেতারাও কিস্তির সময় পার হলেই মেয়াদোত্তীর্ণ হবে ঋণ বিভেদ মেটাতে মাঠে আওয়ামী লীগ নেতারা রেমিট্যান্সে সুবাতাস, ১২ দিনে এলো ৮৭ কোটি ডলার বাংলাদেশ ও চীনের বন্ধুত্বপূর্ণ পথচলা হয়ে উঠুক আরো শক্তিশালী বিএনপি এদেশের সাম্প্রদায়িকতার বিশ্বস্ত ঠিকানা: ওবায়দুল কাদের আজ খুলছে অফিস-আদালত-ব্যাংক-বিমা

পুরোদমে চলছে ১২ স্থলবন্দর, ঢেলে সাজানো হচ্ছে আরও ১২টি

সিরাজগঞ্জ টাইমস / ৪৩ বার পড়া হয়েছে।
সময় কাল : বুধবার, ১৬ নভেম্বর, ২০২২

বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ (বিএসবিকে) প্রতিষ্ঠিত হয় ২০০১ সালে। স্বায়ত্তশাসিত এ প্রতিষ্ঠানটি নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ। স্থলপথে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য কার্যক্রম সহজ ও অধিকতর উন্নত করতে কাজ করে যাচ্ছে এ সংস্থাটি। বিএসবিকের আওতায় এ পর্যন্ত মোট ২৪টি স্থল শুল্ক স্টেশনকে ‘স্থলবন্দর’ ঘোষণা করা হয়েছে। যার মধ্যে ১২টি পূর্ণতা পেয়েছে এবং কার্যক্রম চালু রেখেছে। সংস্থার ব্যবস্থাপনায় সাত বন্দরের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। পাঁচটি বন্দরের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে বিল্ড অপারেট ও ট্রান্সফার (বিওটি) ভিত্তিতে। অন্য ১২ বন্দরে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো না থাকলেও কিছু জায়গায় কার্যক্রম চলমান। এর মধ্যে চারটির কাজ শতভাগ সম্পন্ন। যেকোনো সময় উদ্বোধন করা হতে পারে। এছাড়া প্রস্তাবিত রয়েছে আরও দুটি স্থলবন্দর।

প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে স্থলপথে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারে ২৪টি শুল্ক স্টেশনকে স্থলবন্দর ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে ১২টি ফুল ফেইজে চালু। সেখানে প্রয়োজনীয় অবকাঠামোও রয়েছে। অন্য ১২টি স্থলবন্দরের অবকাঠামো ঢেলে সাজানো হচ্ছে। এর মধ্যে চারটির কাজ শেষ। আর দুটি স্থলবন্দর প্রস্তাবিত।

কাজ চলছে যেসব বন্দরের
বর্তমানে ১২টি স্থলবন্দরের কাজ চলছে। সেগুলো হলো—সিলেটের বিয়ানীবাজারের দুবাগ ইউনিয়নের কোনাগ্রাম সীমান্তে শেওলা স্থলবন্দর, জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার ধানুয়া কামালপুর, ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটের গোবরাকুড়া ও কড়ইতলী স্থলবন্দর, ফেনীর বিলোনিয়া স্থলবন্দর, রামগড় স্থলবন্দর, চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদার দর্শনা স্থলবন্দর, দৌলতগঞ্জ স্থলবন্দর, রাঙ্গামাটির বরকল উপজেলার টেগামুখ স্থলবন্দর, নীলফামারীর চিলাহাটী স্থলবন্দর, সিলেটের ভোলাগঞ্জ স্থলবন্দর।

২২ একরের শেওলা স্থলবন্দর
শেওলা স্থলবন্দরটি সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার দুবাগ ইউনিয়নের কোনাগ্রাম সীমান্তে অবস্থিত। এর বিপরীতে ভারতের আসাম রাজ্যের করিমগঞ্জ জেলার সুতারকান্দি সীমান্ত। আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম সহজ করার লক্ষ্যে ২০১৫ সালের ৩০ জুন শেওলা শুল্ক স্টেশনকে স্থলবন্দর ঘোষণা করা হয়। সিলেট শহর থেকে বিয়ানীবাজারে যাওয়ার আগে শেওলা সেতু পার হয়ে দুবাগ পয়েন্ট। এ জায়গা থেকে পূর্বদিকে প্রায় চার কিলোমিটার দূরত্বে স্থলবন্দরটি অবস্থিত। ঢাকা থেকে বিয়ানীবাজার উপজেলা সদরের দূরত্ব প্রায় ২৭২ কিলোমিটার। বিয়ানীবাজার উপজেলা সদর থেকে সীমান্তের দূরত্ব প্রায় ১৪ কিলোমিটার। এ স্থলবন্দরের সঙ্গে সড়কপথে ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য স্থানের যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো।

নির্মাণকাজের অবস্থা
বিশ্বব্যাংক ও সরকারের যৌথ অর্থায়নে বাংলাদেশ রিজিওনাল কানেকটিভিটি প্রজেক্ট-১-এর আওতায় শেওলা স্থলবন্দরের উন্নয়নকাজ চলমান। ২০২০ সালের ১৮ এপ্রিল নির্মাণকাজের জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিপত্র সই হয়। প্রকল্পের আওতায় শেওলা স্থলবন্দরের জন্য ২২ দশমিক ২ একর জমি অধিগ্রহণের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন। এ শুল্ক স্টেশনের মাধ্যমে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম চলছে।

ঢেলে সাজানো হচ্ছে সিলেটের বিয়ানীবাজারের দুবাগ ইউনিয়নের কোনাগ্রাম সীমান্তে শেওলা স্থলবন্দর, জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার ধানুয়া কামালপুর, ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটের গোবরাকুড়া ও কড়ইতলী স্থলবন্দর, ফেনীর বিলোনিয়া স্থলবন্দর, রামগড় স্থলবন্দর, চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদার দর্শনা স্থলবন্দর, দৌলতগঞ্জ স্থলবন্দর, রাঙ্গামাটির বরকল উপজেলার টেগামুখ স্থলবন্দর, নীলফামারীর চিলাহাটী স্থলবন্দর, সিলেটের ভোলাগঞ্জ স্থলবন্দর।

যেসব পণ্য আমদানি-রপ্তানি হবে
গবাদিপশু, মাছের পোনা, ফল, গাছ-গাছড়া, বীজ, গম, পাথর (স্টোন অ্যান্ড বোল্ডারস), কয়লা, রাসায়নিক সার, চায়না ক্লে, কাঠ, টিম্বার, চুনাপাথর, পেঁয়াজ, মরিচ, রসুন, আদা, কোয়ার্টজ, ফুল ইত্যাদি। এ স্থলবন্দর দিয়ে সব পণ্য রপ্তানি করা যাবে।

ধানুয়া কামালপুর স্থলবন্দর
ধানুয়া কামালপুর স্থলবন্দরে অবকাঠামো নির্মাণকাজ চলমান। জামালপুরে বকশীগঞ্জ উপজেলার ধানুয়া কামালপুর সীমান্তে এ বন্দর অবস্থিত। এর বিপরীতে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের আমপতি মহাকুমার মহেন্দ্রগঞ্জ সীমান্ত। স্থলপথে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম সহজ করার লক্ষ্যে ২০১৫ সালের ২১ মে ধানুয়া কামালপুর শুল্ক স্টেশনকে স্থলবন্দর ঘোষণা করা হয়। ঢাকা থেকে বকশীগঞ্জ উপজেলা সদরের দূরত্ব প্রায় ২১৮ কিলোমিটার। বকশীগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে ধানুয়া কামালপুর স্থলবন্দরের দূরত্ব প্রায় ৯ কিলোমিটার। এ বন্দরের সঙ্গে সড়কপথে ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য স্থানের যোগাযোগ ব্যবস্থা বেশ ভালো।

শুরু হয়নি অবকাঠামো নির্মাণকাজ
‘ধানুয়া কামালপুর স্থলবন্দর উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্প অনুমোদিত হয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় ১৫ দশমিক ৮০ একর জমি অধিগ্রহণও শেষ। এরইমধ্যে প্রকল্পের আওতায় দুটি প্যাকেজের নির্মাণকাজের কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। অবশিষ্ট প্যাকেজের দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। তবে ঠিকাদার কাজ শুরু করতে গেলে জমির মালিকরা দাম কম নির্ধারণের অভিযোগ তুলে কাজে বাধা দেন। ফলে এখনো বন্দরের অবকাঠামো নির্মাণের কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি। বর্তমানে সেখানে শুল্ক স্টেশনের মাধ্যমে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম চালু রয়েছে।

যেসব পণ্য আমদানি করা যাবে
গবাদিপশু, মাছের পোনা, ফল, গাছ-গাছড়া, বীজ, গম, পাথর (স্টোনস অ্যান্ড বোল্ডারস), কয়লা, রাসায়নিক সার, চায়না ক্লে, কাঠ, টিম্বার, চুনাপাথর, পেঁয়াজ, মরিচ, রসুন, আদা, বলক্লে, কোয়ার্টজ ও সুপারি। এ স্থলবন্দর দিয়ে প্লাস্টিকসহ নানা ধরনের পণ্য ও সেবা ভারতে রপ্তানি করা হচ্ছে।

কাজ শেষে গোবরাকুড়া-কড়াইতলী বন্দরের
মেঘালয়ের ঝরনা সবুজাভ পাহাড়শ্রেণি গায়ে মাখিয়ে নেমে এসেছে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটের গোবরাকুড়া ও কড়ইতলীর নদীতে। এ নদীর পাশেই নির্মিত হচ্ছে গোবরাকুড়া ও কড়ইতলী স্থলবন্দর। হালুয়াঘাট উপজেলা সদর থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে একপাশে গোবরাকুড়া এবং ছয় কিলোমিটার দূরে অন্যপাশে কড়ইতলী স্থলবন্দর। ৬৭ কোটি টাকা ব্যয়ে দুটি স্থলবন্দরের কাজ শতভাগ সম্পন্ন হয়েছে।

এ স্থলবন্দর দিয়ে আগে কয়লা আমদানি হতো। বর্তমানে সেটা বন্ধ। প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে বাণিজ্য সম্প্রসারণ, যোগাযোগ স্থাপন ও সরকারি রাজস্ব আদায়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে সহায়তার জন্য ‘গোবরাকুড়া-কড়ইতলী স্থলবন্দর উন্নয়ন’ নামের প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়। পুরোপুরি চালু করা গেলে অদূর ভবিষ্যতে কড়ইতলী বন্দর দিয়ে মানুষ পারাপার এবং গোবরাকুড়া বন্দর দিয়ে পণ্য পারাপার হবে।

কড়ইতলী-গোবরাকুড়ার ওপাশে (ভারতের অংশে) মেঘালয় রাজ্যের তোড়া জেলায় গান্ধীনগর গাছুয়াপাড়া শুল্ক স্টেশন অবস্থিত। অর্থাৎ ওই স্টেশনের সঙ্গেই সংযোগ ঘটবে কড়ইতলী-গোবরাকুড়ার। বন্দর দুটি চালু হলে কেবল কয়লা নয়, ভারতে বিভিন্ন ধরনের পণ্যও রপ্তানি করা হবে। ভারতের মেঘালয় ও আসাম রাজ্য এবং ভুটান ও নেপালে পণ্য পাঠাতে পারবেন বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা। তখন উত্তর-পূর্বের রপ্তানি বাজারে প্রবেশের অন্যতম দরজা হবে গোবরাকুড়া ও কড়ইতলী স্থলবন্দর।

প্রকল্পের আওতায় স্থলবন্দর দুটিতে ওয়্যারহাউজ, পার্কিং ইয়ার্ড, অফিস ভবন, ওয়েব্রিজ স্কেল, ডরমিটরি ভবন, নিরাপত্তারক্ষীদের থাকার ব্যারাক ভবনসহ বিভিন্ন অবকাঠামোর নির্মাণকাজ শতভাগ সম্পন্ন হয়েছে। ২০২২ সালের জুনে এ কাজ শেষ হয়। ঢাকা থেকে এ দুটি স্থলবন্দরের দূরত্ব ১৮০ কিলোমিটার, যা সবচেয়ে কম।

প্লাস্টিক-খাদ্যপণ্য রপ্তানির রুট বিলোনিয়া স্থলবন্দর
ফেনীর বিলোনিয়া স্থলবন্দর ১০ একর জমির ওপর নির্মিত হয়েছে। এ বন্দরের কাজ শতভাগ শেষ হয়েছে। বিলোনিয়া স্থলবন্দরটি এখন উদ্বোধনের অপেক্ষায়। এ বন্দর দিয়ে দ্বিমুখী বাণিজ্য চালু হবে। ৩৯ কোটি টাকা ব্যয়ে এটা নির্মিত হয়েছে। ১০ একর জমিতে ওপেন স্ট্যাক ইয়ার্ড, পার্কিং ইয়ার্ড, গুদামঘর, তিনতলা অফিস ভবনসহ যাবতীয় অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়। এখন অপেক্ষা শুধু চালুর।

আগে থেকেই এটি শুল্ক স্টেশন হিসেবে কার্যকর ছিল। স্থলবন্দরটি চালু হলে প্লাস্টিক পণ্য, জুস, নানা ধরনের পানীয় ভারতে রপ্তানি বাড়বে। ইট, পাথর, সিমেন্ট, রড, রপ্তানি হচ্ছে ভারতে। অন্যদিকে ভারত থেকে মাছের পোনা, তাজা ফলমূল, কাঠ, বীজ, কয়লা, গম, চুনাপাথর, পেঁয়াজ, মরিচ, হলুদ ও আদা আমদানির অনুমোদন থাকলেও দীর্ঘ একযুগ ধরে শুধু একমুখী বাণিজ্য চলে আসছে।

প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর অভাবে ব্যবসায়ীরা পণ্য রপ্তানি-আমদানিতে নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতো। তবে সেই চিরচেনা সমস্যা আর থাকবে না। মালবাহী ট্রাক আর সড়কে নয়, থাকবে পার্কিং ইয়ার্ডে। চালকরা টয়লেটসহ বিশ্রামের সুবিধা পাবেন। প্রতিদিন গড়ে ৩০-৪০ ট্রাক মালামাল লোড-আনলোড হয়। অবকাঠামোগত সমস্যাসহ নানা কারণে বিলোনিয়া সীমান্তে দীর্ঘসময় ধরে ট্রাক আটকে থাকে। তবে উদ্বোধনের পরে সেই সমস্যা নিরসন হবে।

রপ্তানি ও চলাচলের নতুন দ্বার রামগড়
উদ্বোধনের অপেক্ষায় রামগড় স্থলবন্দর। এখানে ইমিগ্রেশন চালু হবে। ফলে মানুষও যাতায়াত করতে পারবে। কম খরচে এ স্থলবন্দর হয়ে উন্নত চিকিৎসা নিতে ভারতের যেতে পারবেন। দুদেশের মধ্যে পণ্য রপ্তানি-আমদানিও বাড়বে। রামগড় স্থলবন্দর পুরোদমে চালু হলে ব্যবসা-বাণিজ্য, উচ্চশিক্ষা ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে দুই দেশের মানুষ উপকৃত হবে। এরইমধ্যে স্থলবন্দর ঘিরে ১০ একর জায়গায় বন্দর টার্মিনাল, সড়কপথ, গুদামঘর, চেকপোস্ট, কাস্টমস ও বিজিবির জন্য জমি অধিগ্রহণসহ অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণকাজ শেষ।

চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ১১২ কিলোমিটার দূরত্বের এ স্থলবন্দর দিয়ে মাত্র তিন ঘণ্টায় ট্রান্সশিপমেন্টের পণ্য পৌঁছবে ভারতের ত্রিপুরার সাব্রুমে। ২০১৫ সালের ৬ জুন ঢাকা সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী রামগড় স্থলবন্দর ফেনী নদীর ওপর বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সেতু-১-এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ফলে দীর্ঘদিনের আশা পূরণ হতে যাচ্ছে রামগড় স্থলবন্দর।

রেলওয়ে রুট হবে দর্শনা
চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনা সীমান্তে অবস্থিত দর্শনা স্থলবন্দর। এর বিপরীতে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কৃষ্ণনগরের গেদে সীমান্ত। স্থলপথে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম সহজ করার লক্ষ্যে দর্শনা শুল্ক স্টেশনকে ২০০২ সালে স্থলবন্দর ঘোষণা করা হয়। ঢাকা থেকে চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের দূরত্ব প্রায় ২৩৮ কিলোমিটার। চুয়াডাঙ্গা জেলা সদর থেকে স্থলবন্দর দূরত্ব প্রায় ২০ কিলোমিটার।

দর্শনা বন্দরের সঙ্গে সড়ক ও রেলওয়ে পথে ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য স্থানের উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা রয়েছে। স্থলবন্দরে অনুমোদিত জনবলের সংখ্যা আটজন। দর্শনা শুল্ক স্টেশনকে রেলরুট হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু এ স্থানে স্থলরুট চালু নেই। দর্শনা স্থলবন্দর চালু করার জন্য রেলরুটের পাশাপাশি স্থলরুটও ঘোষণা করা প্রয়োজন। এ বিষয়ে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) অনুরোধ জানানো হয়েছে।

আমদানিযোগ্য পণ্য
গবাদিপশু, মাছের পোনা, তাজা ফলমূল, গাছ-গাছড়া, বীজ, গম, পাথর (স্টোনস অ্যান্ড বোল্ডারস) কয়লা, রাসায়নিক সার, চায়না ক্লে, কাঠ, টিম্বার, চুনাপাথর, পেঁয়াজ, মরিচ, রসুন, আদা, বলক্লে, কোয়ার্টজ, চাল, ভুসি, ভুট্টা, বিভিন্ন প্রকার খৈল, পোলট্রি ফিড, ফ্লাই অ্যাশ, রেলওয়ে স্লিপার, বিল্ডিং স্টোন, রোড স্টোন, স্যান্ড স্টোন, বিভিন্ন প্রকার ক্লে, গ্রানুলেটেড স্লাগ ও জিপসাম।

দৌলতগঞ্জ স্থলবন্দর
চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার দৌলতগঞ্জ সীমান্তে অবস্থিত এ স্থলবন্দর। এর বিপরীতে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের নদীয়া জেলার মাজদিয়া সীমান্ত। দৌলতগঞ্জ শুল্ক স্টেশনকে ২০১৩ সালে স্থলবন্দর ঘোষণা করা হয়। ঢাকা থেকে জীবননগর উপজেলা সদরের দূরত্ব প্রায় ২৪৯ কিলোমিটার। জীবননগর উপজেলা সদর থেকে দৌলতগঞ্জ স্থলবন্দরের দূরত্ব প্রায় সাত কিলোমিটার। এ স্থলবন্দরের সঙ্গে সড়কপথে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা রয়েছে।

বর্তমান অবস্থা
বাংলাদেশ-ভারত উভয় পাশে শুল্ক স্টেশনের কার্যক্রম না থাকায় দৌলতগঞ্জ স্থলবন্দরের উন্নয়ন কার্যক্রম গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। ভারতীয় অংশে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়নসহ তাদের শুল্ক স্টেশনকে পুনরুজ্জীবিতকরণে সম্মত করার জন্য নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) অনুরোধ জানানো হয়েছে।

আমদানিযোগ্য পণ্য
গবাদিপশু, মাছের পোনা, তাজা ফলমূল, গাছ-গাছড়া, বীজ, গম, পাথর (স্টোনস অ্যান্ড বোল্ডারস) কয়লা, রাসায়নিক সার, চায়না ক্লে, কাঠ, টিম্বার, চুনাপাথর, পেঁয়াজ, মরিচ, রসুন, আদা, বলক্লে, কোয়ার্টজ।

টেগামুখ স্থলবন্দর
রাঙ্গামাটির বরকল উপজেলার টেগামুখ সীমান্তে অবস্থিত এ বন্দরটি। এর বিপরীতে ভারতের মিজোরাম কাউয়াপুচিয়া সীমান্ত। ২০১৩ সালে এটিকে স্থলবন্দর ঘোষণা করা হয়। ঢাকা থেকে রাঙ্গামাটি জেলা সদরের দূরত্ব প্রায় ২৯৬ কিলোমিটার। রাঙ্গামাটি জেলা সদর হতে টেগামুখ স্থলবন্দরের দূরত্ব প্রায় ১৫০ কিলোমিটার। টেগামুখ স্থলবন্দর উন্নয়নে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের সম্মতি না পাওয়ার কারণে স্থলবন্দর স্থাপনের কার্যক্রম বন্ধ।

আমদানিযোগ্য পণ্য
গবাদিপশু, মাছের পোনা, তাজা ফলমূল, গাছ-গাছড়া, বীজ, গম, পাথর, কয়লা, রাসায়নিক সার, চায়না ক্লে, কাঠ, টিম্বার, চুনাপাথর, পেঁয়াজ, মরিচ, রসুন, আদা ইত্যাদি।

চিলাহাটী স্থলবন্দর
নীলফামারী জেলার ডোমার উপজেলার চিলাহাটী সীমান্তে এ বন্দর অবস্থিত। এর বিপরীতে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলার হলদিবাড়ী সীমান্ত। চিলাহাটী শুল্ক স্টেশনকে ২০১৩ সালে স্থলবন্দর ঘোষণা করা হয়। ঢাকা থেকে নীলফামারী জেলা সদরের দূরত্ব প্রায় ৩৪১ কিলোমিটার। নীলফামারী জেলা সদর থেকে চিলাহাটী সীমান্তের দূরত্ব প্রায় ৪৭ কিলোমিটার। চিলাহাটী বাজার থেকে রেল ও সড়কপথে দেশের অন্যান্য স্থানের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা বেশ ভালো।

বর্তমান অবস্থা
চিলাহাটী শুল্ক স্টেশনকে স্থলবন্দর ঘোষণা করা হলেও বাংলাদেশ-ভারত কোনো অংশেই শুল্ক স্টেশনের কার্যক্রম না থাকায় স্থলবন্দরটি চালু করা সম্ভব হয়নি। বন্দরটি সচল করার লক্ষ্যে চিলাহাটীর বিপরীতে ভারতীয় অংশে হলদিবাড়ী, শুল্ক স্টেশন চালুকরণের নির্মিত ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে সম্মত করার জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) অনুরোধ জানানো হয়েছে।

ভোলাগঞ্জ স্থলবন্দর
সিলেট জেলার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ গ্রামের কালাসাধক মৌজায় অবস্থিত। এর বিপরীতে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পূর্ব খাসি পাহাড়ি জেলার চেরাপুঞ্জি মহকুমার ভোলাগঞ্জ সীমান্ত। স্থলপথে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম সহজ করার লক্ষ্য ভোলাগঞ্জ শুল্ক স্টেশনকে ২০১১ সালে স্থলবন্দর ঘোষণা করা হয়।

ঢাকা থেকে ভোলাগঞ্জ স্থলবন্দরের দূরত্ব প্রায় ৩০০ কিলোমিটার। সড়কপথে ঢাকা থেকে দেশের অন্যান্য স্থানে স্থলবন্দরের যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো। বন্দর উন্নয়নের জন্য সাইট সিলেকশন ও জমি অধিগ্রহণের কার্যক্রম চলমান।

প্রস্তাবিত আরও দুটি স্থলবন্দর
প্রস্তাবিত প্রাগপুর স্থলবন্দর কুষ্টিয়া জেলার দৌলতপুর উপজেলারা প্রাগপুর সীমান্তে অবস্থিত। এর বিপরীতে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের নদীয়া জেলার করিমপুর থানার শিকারপুর সীমান্ত। ঢাকা থেকে দৌলতপুর উপজেলা সদর দূরত্ব প্রায় ২১৮ কিলোমিটার। দৌলতপুর উপজেলা সদর থেকে প্রাগপুর স্থলবন্দরের দূরত্ব প্রায় ১৭ কিলোমিটার।

বাংলাদেশ-ভারত কোনো অংশেই শুল্ক স্টেশনের কার্যক্রম না থাকায় এটি এখনো স্থলবন্দর ঘোষণা করা হয়নি। তবে প্রাগপুর শুল্ক স্টেশন চালু করা ও ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে তাদের অংশে শুল্ক স্টেশন ঘোষণার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) অনুরোধ জানানো হয়েছে।

প্রস্তাবিত আরেকটি স্থলবন্দর মুজিবনগরে অবস্থিত। মেহেরপুর জেলার মুজিবনগর সীমান্তে এটি অবস্থিত। এর বিপরীতে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের নদীয়া জেলার চাপড়া থানাধীন হৃদয়পুর সীমান্ত। ঢাকা থেকে মেহেরপুর জেলা সদরের দূরত্ব প্রায় ২৮৯ কিলোমিটার। মেহেরপুর জেলা সদর থেকে মুজিবনগরের দূরত্ব প্রায় ২৫ কিলোমিটার। বাংলাদেশ-ভারতের কোনো অংশেই শুল্ক স্টেশন কার্যক্রম না থাকায় মুজিবনগর শুল্ক স্টেশনকে এখনো স্থলবন্দর ঘোষণা করা সম্ভব হয়নি।

চালু রয়েছে যে ১২ স্থলবন্দর
যশোরের বেনাপোল, লালমনিরহাটের বুড়িমারী, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া, সাতক্ষীরার ভোমরা, শেরপুরের নাকুগাঁও, কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারী ও চুয়াডাঙ্গার দর্শনা স্থলবন্দর বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে চলমান। এছাড়া বিওটি’র মাধ্যমে চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ, দিনাজপুরের হিলি, পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা, কক্সবাজারের টেকনাফ, দিনাজপুরের বিরল ও কুমিল্লার বিবিরবাজার স্থলবন্দর চালু রয়েছে।

বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের নির্বাহী প্রকৌশলী (চলতি দায়িত্ব) মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে স্থলপথে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারে ২৪টি শুল্ক স্টেশনকে স্থলবন্দর ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে ১২টি ফুল ফেইজে চালু। সেখানে প্রয়োজনীয় অবকাঠামোও রয়েছে। অন্য ১২টি স্থলবন্দরের অবকাঠামো ঢেলে সাজানো হচ্ছে। এর মধ্যে চারটির কাজ শেষ। আর দুটি স্থলবন্দর প্রস্তাবিত।’


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর